রাজধানীর পল্লবী ও উত্তরায় গতকাল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। ঈদের আগে বকেয়া বেতন ও বোনাস দাবিতে পোশাকশ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেন বলে জানা যায়। এ অবরোধের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট তৈরি হয়। গতকাল দুপুরে পল্লবীর ১১ নম্বর সড়কে অবস্থান নেন কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। উত্তরার জসীমউদ্?দীন-আজমপুরের সড়কে অবস্থান নেন ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেড নামে দুটি গার্মেন্টের শ্রমিকেরা। তবে উত্তরার দুটি গার্মেন্টের মালিক একজন। জসীমউদ্দীন-আজমপুরে প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ চলার পর পুলিশ টিয়ার শেল মেরে সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পল্লবীর রাস্তায় অবস্থান নেওয়া শ্রমিকরা বলছেন, তাদের গার্মেন্টে প্রায় ৩০০ শ্রমিক আছেন। তাদের কেউই এ বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বেতন পাননি। সব বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস ২০ এপ্রিল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা টাকা পাননি। গার্মেন্ট মালিকও দুই সপ্তাহ ধরে কারখানায় আসছেন না। বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা ২৩ এপ্রিল সড়ক অবরোধ করেছিলেন। তখন মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা গতকালও কোনো বেতন পাননি। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না। পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, ৭০ থেকে ৮০ জন রাস্তায় বসে বেতন ও বোনাসের দাবিতে স্লোগান দেন। পল্লবী থানার এসআই তোফায়েল আহমেদ বলেন, শ্রমিকরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে এক পাশের রাস্ত বন্ধ থাকায় যানজট তৈরি হয়। এদিকে বকেয়া বেতন ও বোনাস দাবিতে উত্তরার জসীমউদ্দীনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পৃথক দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। উত্তরার ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের কারও দুই মাস, আবার কারও তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে। ওভারটাইম ও বোনাসও তারা পাননি। এ কারণে তারা সড়কে নেমেছেন। গতকাল বেলা পৌনে ২টা পর্যন্ত সড়কে তাদের এ অবরোধে স্থবির হয়ে পড়ে বিমানবন্দর-উত্তরা সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা।
সড়ক অবরোধে যানজট ছাড়িয়ে যায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একই মালিকানাধীন দুটি পোশাক কারখানার কয়েক শ শ্রমিক বেলা ১২টার দিকে জসীমউদ্দীন রোডে সড়ক অবরোধ করেন। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। খুব দ্রুত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি ব্যস্ততম মহাসড়কটি বন্ধ থাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের লোকজন যানজট নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) তাপস কুমার সাহা জানান, কিছু শ্রমিক ইট নিয়ে যানবাহনের দিকে ছুড়ছিল আর গাড়ি ভাঙচুর করছিল। তাদের তখন বুঝিয়ে নিবৃত্ত করতে না পেরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।