বৃহস্পতিবার। বেলা ১১টা। রাজধানীর আজিমপুরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আবাসনের সামনে সাড়ে ৩ শতাধিক নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। সবাই খাদ্য অধিদফতরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন। ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে আজিমপুরের ছাপরা মসজিদ এলাকায় মানুষের এ ভিড় চোখে পড়ল। ট্রাকের সামনে নারীদের লাইনটিই ছিল বেশি লম্বা। ওই লাইনে প্রায় ১৯০ জন নারী পণ্য কেনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশেই আরেকটি লাইনে পুরুষের সংখ্যা ছিল দেড় শতাধিক। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক নারী-পুরুষ জানান, তাদের কেউ কেউ সকাল ৭টা থেকে ওএমএসের পণ্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। নির্ধারিত ওই স্থানে ট্রাক পৌঁছায় সকাল সাড়ে ৯টার পর। বেলা পৌনে ১১টায় মন্ত্রী গিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধনের পর আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হয়। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ওএমএস কেন্দ্র সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দিন দিনই বাড়ছে ওএমএসের চাল-আটা কেনা মানুষের সংখ্যা। যত দিন যাচ্ছে ততই লম্বা হচ্ছে এ লাইন। লাইন শেষ হওয়ার আগেই শেষ হচ্ছে ওএমএসের চাল-আটা আর স্বল্প আয়ের সেই মানুষগুলোকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে বাড়ি। খালি হাতে ফেরা স্বল্প আয়ের মানুষগুলো ওএমএস কর্মসূচির চাল-আটার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সরকারের প্রতি। তাদের মতে, নিত্যপণ্যের দাম দিন দিনই বাড়ছে। চাল, আটা, সবজিসহ ওষধপত্রের দামও বেড়েছে অনেক। অনেকে তিন বেলার জায়গায় এখন দুই বেলা খাওয়া শুরু করেছেন। এমন অবস্থায় ওএমএস কর্মসূচি উদ্বোধনকালে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হওয়ায় বাজারে চালের দাম কমবে। ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে প্রতি মাসে ৩ লাখ টন চাল দেওয়া হবে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও গম ও চাল আমদানি করা হবে। দেশে চালের কোনো সংকট নেই। প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালেই দেখা যায় প্রচুর পরিমাণ চাল রয়েছে। চালে কেউ অস্বাভাবিক মুনাফা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। ওএমএসের চাল ও আটা কেনেন আজিমপুরের রনি মার্কেট কাঠপট্টি এলাকার বাসিন্দা নাজমা আক্তার। তিনি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। নাজমা বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রথমে আজিমপুর কবরস্থানের সামনে গিয়ে ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পরে কাউন্সিলরের লোকজন জানান, ট্রাক আসবে এখানে (ছাপরা মসজিদের সামনে)। তাই এখানে চলে আসি।’ নাজমা আক্তার পণ্য কেনার সুযোগ পান বেলা সাড়ে ১১টার পর। তিনি ৫ কেজি চাল ১৫০ টাকা আর ২ কেজির প্যাকেট আটা ৪৩ টাকায় কেনেন। এতে তার খরচ হয় ১৯৩ টাকা। বাজার থেকে ৫ কেজি চাল আর ২ কেজি আটা কিনতে কমপক্ষে ৩০০ টাকা লাগত। এখান থেকে কেনার ফলে ১৮০ টাকার মতো সাশ্রয় হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫৪-৫৫ টাকা, খোলা আটা প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৫ টাকা ও প্যাকেট আটা ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। রামপুরার বৌ-বাজার এলাকায় ওএমএসের ট্রাকের সামনেও দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইন ভেঙে জটলায় রূপ নেয়। সবাই নিজেদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি বিক্রেতার দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সবার উদ্দেশ্য আগে পণ্য কেনা। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে নারী-পুরুষ অনেককে ঘেমে ভিজে যেতে দেখা গেছে। নারীদের লাইনে বিশৃঙ্খলা ছিল বেশি। সালেহা নামের এক নারী চাল ও আটা কিনে যখন ভিড় ঠেলে ফুটপাতের দিকে এগিয়ে এলেন, তখন তিনি নিজের গায়ের ওড়না খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে তিনি ফুটপাতের একপাশে নিজের কেনা পণ্য রেখে ওড়না খুঁজতে ভিড়ের দিকে যান। ওড়না পাওয়ার পর সালেহা বলেন, রবি ও মঙ্গলবার দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়েও কিনতে পারিনি। আজকে সকাল ৭টা থেকে এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। পৌনে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর পণ্য কিনতে পেরেছেন বলে জানান সালেহা। প্রায় অভিন্ন চিত্র ছিল রাজধানীর প্রতিটি ওএমএস কেন্দ্রের।