রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নিয়োগ প্রতারণায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী

জালিয়াত চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের কর্মচারী আবদুস সাত্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় মো. ইয়াছিন মল্লিকের। অফিস সহায়ক পদে চাকরির জন্য সাত্তারের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। ৭ লাখ টাকা নগদ দেন। চাকরির পর বাকি ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এইচএসসি পাস ইয়াছিনের স্বপ্নের চাকরি স্বপ্নই রয়ে যায়। তিনি সাত্তারের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এখন নিঃস্ব। ভুক্তভোগী ইয়াছিন টাকা ফেরত পেতে এবং সাত্তারের বিচার দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, সহকারী সচিব সংস্থাপন-২, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক ও শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়া ২২ জুন ডিএমপির হাজারীবাগ থানায় একটি জিডিও করেন তিনি। এদিকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ভুক্তভোগী মো. ইয়াছিন মল্লিক জানান, ঝালকাঠি সদরের কালি আন্দারে তার বাড়ি। পলওয়েল সুপার মার্কেটের একটি দোকানে চাকরি করেন তিনি। লেখাপড়ায় এইচএসসি পাস। মো. মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী আবদুস সাত্তারের সঙ্গে পরিচয় হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক পদে চাকরির জন্য তিনি প্রলোভন দেখান। ৮ লাখ টাকায় তার সঙ্গে চুক্তি হয়। পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি সেগুনবাগিচার ‘বাগিচা রেস্টুরেন্টে’ ৭ লাখ টাকা নগদ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে আবদুস সাত্তার নিজের রূপালী ব্যাংকের একটি চেক দেন ইয়াছিন মল্লিককে। চাকরি হওয়ার পর বাকি ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ৪ ও ৫ মার্চ ভাইভার জন্য ইয়াছিন মল্লিককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকেন সাত্তার। সেখানে ১০ জনের একটি ভুয়া তালিকাও দেন তিনি।  হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ওই তালিকায় ইয়াছিনকে ৪ নম্বর সিরিয়ালে রাখেন। কিন্তু সাক্ষাৎকার না নিয়ে দুই দিন ধরে ইয়াছিন মল্লিককে ঘোরাতে থাকেন। অফিস সহায়ক পদে চাকরির জন্য তথ্যমন্ত্রীর স্বাক্ষর-সংবলিত একটি আবেদনপত্রও ইয়াছিনকে দেখান সাত্তার। ১০ মার্চ চাকরিতে যোগদানের কথা বলেন। কিন্তু নিয়োগপত্র না দিয়ে তিনি প্রতারণা শুরু করেন। এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন ইয়াছিন মল্লিক। তিনি টাকা ফেরতসহ সাত্তারের বিচার দাবি করেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের কর্মচারী আবদুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে ডিবির মিরপুর বিভাগের এডিসি মোস্তফা কামাল বলেন, পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় ভুয়া নিয়োগপত্রের মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখানো প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- রহিম শিকদার, হাবিবুর রহমান ও মো. সেলিম শেক ওরফে শুভ। শুক্রবার রাজধানীর দারুস সালাম থানার টোলারবাগ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় ভুয়া নিয়োগপত্র, চারটি মোবাইল ফোন, একাধিক ব্লাঙ্ক চেক জব্দ করা হয়।

ডিবি কর্মকর্তা কামাল বলেন, চক্রটি ১০-১১ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে। এর আগেও তারা গ্রেফতার হয়েছিল। আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে ফের প্রতারণা শুরু করে। চক্রটি গত এক বছরে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করেছে। প্রতিটি নিয়োগে তারা ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা নিত। বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য টাকা নেওয়ার পর চেক ও স্ট্যাম্প দিত। প্রার্থীদের কাছ থেকেও টাকার বিপরীতে আগে ব্লাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প নিত, যাতে কেউ প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে না পারে।

 

সর্বশেষ খবর