বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

উড়ালসড়কে বদলে যাবে চট্টগ্রাম

এই একটি সড়কের কারণেই নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগে দুই ঘণ্টা। কিন্তু এটি নির্মাণ হলে যোগাযোগে নতুন মাত্রা তৈরি হবে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উড়ালসড়কে বদলে যাবে চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়ক পতেঙ্গা-বিমানবন্দর থেকে কালুরঘাট। কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। যানজটে পড়লে আরও বেশি সময় লাগে। যানজটের কারণে বিমানযাত্রীদের ফ্লাইট মিস করার ঘটনাও আছে। বাণিজ্যিক রাজধানীর এ মূল সড়কটির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। ক্ষুণ্ন হয় দেশের ভাবমূর্তি।

কিন্তু এখন পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এক্সপ্রেসওয়ের ৩৭৯টি পিলারের মধ্যে ৩০০টির বেশির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। শেষ হয়েছে ৯ কিলোমিটার অংশের ঢালাইকাজ। এখন বন্দর মোড়, টাইগারপাস ও লালখান বাজার এলাকায় পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রস্থের প্রকল্পটির পিলার ও ঢালাইকাজ আগামী বছর জুন মাসের মধ্যে এবং পূর্ণাঙ্গ কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা।

এটি নির্মাণ হলে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছা যাবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর। কমবে ভোগান্তি। আকৃষ্ট হবেন দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগকারীরা। বাড়বে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। বিকশিত হবে পর্যটন খাত। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে যোগাযোগব্যবস্থায়। এটি সংযুক্ত হবে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে। যানজট মুক্ত হবে বিমানযাত্রীদের যাতায়াতের পথ। সঙ্গে ভোগান্তি নিরসন হবে কালুরঘাট-পতেঙ্গা পর্যন্ত মূল সড়কে যাতায়াতকারীদের। ফলে স্বপ্ন ছোঁয়ার পথেই এগোচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তবে গতকাল একনেক সভায় প্রথম সংশোধনীতে প্রায় ৩২ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। এখন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে প্রকল্পটির কাজ। মূল প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। তিন শতাধিক পিলার নির্মাণের কাজও শেষ। পিলারের কাজ শেষ হলে র‌্যাম্প নির্মাণসহ অন্য কাজগুলো শুরু করা হবে। চলমান গতিতে কাজ চললে আগামী শুষ্ক মৌসুমে অবকাঠামোগত সব কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা সময় নানা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এখন সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাই কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এ ছাড়া গতকালের একনেক বৈঠকে প্রকল্পটির ব্যয় ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য সুখবর।

মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক তরুণ উদ্যোক্তা সারওয়ার আলম বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কারণ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পর্যটকদের এই একটি সড়কের কারণেই নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগে দুই ঘণ্টা। কিন্তু এটি নির্মাণ হলে চট্টগ্রামে সড়ক যোগাযোগে নতুন মাত্রা তৈরি   হবে। কমবে যানজট। ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বিদেশিদের কাছে। বিশেষত কোনো বিমানযাত্রীকে ফ্লাইট মিস করতে হবে না। এ ছাড়া এটি টানেলের সঙ্গে যুক্ত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষদের যাতায়াতও সহজ হবে। তবে আমাদের দাবি, এটির সঙ্গে আউটার রিং রোড ও পোর্ট কানেক্টিং রোডের সংযোগ করে দেওয়া। তাহলে বন্দর থেকে পণ্যবাহী যানবাহনগুলো বের হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে পারবে।’

চউক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন।

সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এই এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট, দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড়, কাঠগড় থেকে ভিআইপি রোড এবং সি-বিচ থেকে ভিআইপি রোড পর্যন্ত ভাগ করে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পুরো এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় গাড়ি ওঠানামার জন্য ২৪টি র‌্যাম্প থাকবে।

এর মধ্যে টাইগারপাস এলাকায় চারটি, আগ্রাবাদে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলী মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেডে চারটি, কেইপিজেডে দুটি, কাঠগড়ে দুটি, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় থাকবে দুটি র‌্যাম্প। প্রতিটি র‌্যাম্প হবে দুই লেনের এবং একমুখী।

সর্বশেষ খবর