রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পাহাড়ের সভ্যতার ইতিহাস ও কালের সাক্ষী ফুলকলি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

পাহাড়ের সভ্যতার ইতিহাস ও কালের সাক্ষী ফুলকলি

নাম তার ফুলকলি। ষাটের দশকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সরকারি প্রশাসনের দাফতরিক কাজ সম্পাদন ও দুর্যোগকালীন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নির্ভরতার প্রতীকের একটি নাম ফুলকলি। পাহাড়ের সভ্যতার ইতিহাস ও যোগাযোগের কালের সাক্ষী। যা এখন জেলার ইতিহাসের পাতায় অংশ হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। অবিভক্ত বাংলায় বিভিন্ন কাজের জন্য হাতির ব্যবহার ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালে তৎকালীন সাব-ডিভিশন অফিসার (মহকুমা প্রশাসক) হাবিবুল ইসলামের সময় খাগড়াছড়ির রামগড়ে (বর্তমান উপজেলা) একটি হাতি নিয়ে আসা হয়। যার নাম দেওয়া হয় ‘ফুলকলি’। রামগড় মহকুমা প্রশাসন দাফতরিক কাজে ফুলকলিকে ব্যবহার করে। জনশ্রুতি আছে, ফুলকলি সিলেট থেকে এসেছে এবং তার পিতার নাম রাজবাহাদুর। ফুলকলিরা ছিল এক ভাই, এক বোন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি (জেলা শহর) জেলায় উন্নীত হলে ফুলকলিকে রামগড় থেকে খাগড়াছড়ি শহরে নিয়ে আসা হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্গম এলাকার দাফতরিক কাজ করার জন্য একমাত্র উপযোগী বাহন ছিল ফুলকলি। সে সময় প্রতি বছর মহান বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে ফুলকলিকে মাঠে নিয়ে আসা হতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিংবা কাঁচা সড়কে দুর্ঘটনায় চান্দের গাড়ি (জিপ) পাহাড়ের খাদে পড়ে গেলে সে গাড়ি তোলার কাজে ফুলকলিকে ব্যবহার করা হতো। এভাবেই ফুলকলি জেলাবাসীর জন্য কাজ করে গেছে। চেংগী নদীতে ফুলকলিকে যখন গোসল করতে আনা হতো তখন তাকে দেখতে লোকজন ভিড় করত।

একসময় পথ চলতে গিয়ে আলুটিলায় খাদে পড়ে আহত হয় ফুলকলি। অনেক চিকিৎসায়ও আর বাঁচানো যায়নি। ১৯৯০ সালের ২৭ জুলাই মারা যায় পাহাড়ের মানুষের প্রাণপ্রিয় ফুলকলি। জেলা প্রশাসন সেই হাতিকে পরম মমতায় সমাধিস্থ করে জেলা শহরের অদূরে জিরো মাইল সংলগ্ন এলাকায়। রাস্তার পাশে কিছুদিন আগেও এটি ছিল একটি জীর্ণশীর্ণ হাতির সমাধি। বর্তমান জেলা প্রশাসক প্রতাপচন্দ্র বিশ্বাস সেটিকে অক্ষত রেখে শুরু করেন আধুনিকায়নের কাজ। বর্তমানে তার পাশে ফুলকলির আদলে একটি প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়। পাশাপাশি নির্মিত হয় একটি দৃষ্টিনন্দন ভবন। সেখানে লেখা আছে ফুলকলির জীবনের ইতিহাস ও বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা সমাধিতে যান ফুলকলি সম্পর্কে জানতে।

ফুলকলির পিঠে চড়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক খোরশেদ আনসার খান অন্যান্য উপজেলায় যেতেন। এ হাতিটি শুধু জেলা প্রশাসনেরই নয়, জেলার সব মানুষেরও প্রিয় ছিল। তাই আজও মানুষ স্মরণে রেখেছে হাতিটি। প্রতিদিন শত শত পর্যটক হাতির সমাধি দেখতে ও ইতিহাস জানতে ভিড় করছে।

সর্বশেষ খবর