সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মুখোমুখি রামেক-রাবি

রাবি ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মামলা, হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও রাবি প্রতিনিধি

মুখোমুখি রামেক-রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলাও করেছে দুই পক্ষ। রাবি শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীরা সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। বিকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ‘অবহেলায়’ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘একপাক্ষিক’ কথা বলায় রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ একাত্মতা প্রকাশ করে। মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- শাহরিয়ারের চিকিৎসায় অবহেলা এবং লাশের পাশে অবস্থানকালে সহপাঠীদের ওপর হামলা, হত্যাচেষ্টা ও শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আনসারদের অবিলম্বে দায়িত্ব থেকে অপসারণ এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে; এ ঘটনার প্রত্যক্ষ মদদদাতা হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানীকে অপসারণ করতে হবে; হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও জরুরি মুহূর্তে ফরমালিটিজের নামে হয়রানি, চাঁদাবাজি ও ক্লিনিকের সঙ্গে যোগসাজশ বন্ধ করতে হবে; হাসপাতালে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙা এবং চিকিৎসকের দোষ ওয়ার্ড বয়ের ওপর আর ওয়ার্ড বয়ের দোষ চিকিৎসকের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি ভাঙতে হবে।

অন্য দাবির মধ্যে আছে- এমপি ফজলে হোসেন বাদশাকে অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে; ইন্টার্ন চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচারিতা, রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ পরিহার করতে হবে; জরুরি বিভাগে নার্স ও ওয়ার্ড বয় দিয়ে প্রক্সি দেওয়া বন্ধ করে সিনিয়র চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে; আইসিইউ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, ‘শাহরিয়ারকে আইসিইউতে নিতে আমি বারবার ইন্টার্ন চিকিৎসককে অনুরোধ করি। কিন্তু কাজ হয়নি। পরে ব্রিগেডিয়ারকে বলি। তখন তার কথা শুনে মনে হলো, কেন এ শহরের সবাই তার কাছে অসহায়। তিনি আমাকে বোঝান, ‘কীভাবে আইসিইউ পেতে হয় সেটা আপনার জানা উচিত, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জানা উচিত।’ আমি তখন বলি, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ বছর ধরে চাকরি করি, আমি জানি না, আমাকে জানান। তখন তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবেদন করলেও তাকে ওয়েট করতে হবে’। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাত্মতা পোষণ করেছে।

হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে শনিবার তিন দিনের কর্মবিরতির ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। গতকাল সকালে তারা কর্মসূচি পালন করলেও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকালে তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন বলেন, রোগীদের কথা চিন্তা করে, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এমন অশ্বাস পেয়ে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছেন। তবে সেদিনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তারা আবারও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বিকালে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শামীউল ইসলাম। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ইন্টার্নদের প্রধান দুটি দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তারা কাজে ফিরে যাচ্ছেন। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হবে, সেটি স্বাস্থ্য বিভাগ দেখবে। এদিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। বিকালে হড়গ্রামের নিজ বাড়ির দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি রাবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আপনারা জানেন আমি যা কথা বলি স্পষ্ট করে বলি। আমি এখন বলতে চাইছি, বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিরুদ্ধে, আমাকে অবাঞ্ছিত বলা, এটি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির, জঙ্গিবাদীদের এবং এই খুনিদের ষড়যন্ত্রের ফসল। এটা বাস্তবায়িত কোনো দিন হবে না। আমরা ক্যাম্পাসে যাব, কর্মসূচি দেব।’

বুধবার রাত ৮টার দিকে হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার। হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রাবি শিক্ষার্থীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর