শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

১৭ বছর পর ধরা ‘খুনি কবিরাজ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০০৮ সালে রাজধানীর মিরপুরে থাকতেই কবিরাজি পেশার আড়ালে প্রতারণা শুরু করেন হেমায়েত ওরফে জাহিদ কবিরাজ। জনরোষের মুখে সেখান থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলে যান। সেখানেও শুরু করেন নানা প্রতারণা। এমনই একটি প্রতারণার অভিযোগ তদন্তে রোগীর ছদ্মবেশে হেমায়েত কবিরাজের দরবারে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করে। এরপর র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে হেমায়েত কবিরাজ একটি হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার ডেরা থেকে বিভিন্ন ধরনের ১২৯টি আংটি, তিনটি শঙ্খ, আলাদিনের একটি চেরাগ, দুটি ক্রেস্ট, কবিরাজি সংক্রান্ত বই ১৫টি, পিতলের একটি পাঞ্জা ও কবিরাজি সংক্রান্ত অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে বাগেরহাটের সদর এলাকায় মনু বেগম নামে এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০০৯ সালে ওই হত্যা মামলায় হেমায়েতকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত। এরপর ১৭ বছর তিনি দেশে ও পার্শ্ববর্তী দেশে কবিরাজের ছদ্মবেশে পলাতক ছিলেন। হেমায়েত ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে কবিরাজি শুরু করেন। এর মাধ্যমে নানাভাবে মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করতেন। নারীরাই ছিল তার প্রতারণার মূল টার্গেট। ২০০৩ সালে তিনি স্ত্রী সন্তানসহ পিরোজপুর থেকে বাগেরহাটে গিয়ে কবিরাজি শুরু করেন। তার অন্যতম সহযোগী ছিল হত্যা মামলার অপর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি সোবহান। ওই সোবহানই মনু বেগমকে হেমায়েতের কাছে এনেছিলেন চিকিৎসার জন্য। মনুর কাছে থাকা টাকা-পয়সায় নজর পড়েছিল হেমায়েতের। সে মোতাবেক পরিকল্পনা করে মনুকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দলিলপত্রে টিপসই নেওয়ার চেষ্টা করেন হেমায়েত ও সোবহান। এ নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে হেমায়েত মনুকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেন। পরে তার লাশ ধানখেতে লুকিয়ে রাখেন হেমায়েত। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর গ্রেফতার এড়াতে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যান হেমায়েত। আজমীর শরিফে তিন বছর থাকার পর বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস শুরু করেন। লম্বা চুল ও দাড়িওয়ালা ছবি ব্যবহার করে, আসল নাম ও স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে জাহিদুল ইসলাম নামে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। ২০১২ সালে দারুস সালাম থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি কবিরাজি কাজে ব্যবহারের জন্য কষ্টিপাথরের মূর্তি রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হন। ওই সময় দেড় মাস কারাভোগ করেন হেমায়েত।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর