বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রয়োজন ফুরাচ্ছে দুই রেলস্টেশনের

তেজগাঁও-বনানীতে কমছে যাত্রী ও ট্রেনের সংখ্যা ♦ সড়কপথে আগ্রহ

হাসান ইমন

প্রয়োজন ফুরাচ্ছে দুই রেলস্টেশনের

রাজধানীর বনানী রেলওয়ে স্টেশন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর তেজগাঁও ও বনানী রেলওয়ে স্টেশন। কাজের কারণে গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ ঢাকার আশপাশের জেলার মানুষ এই স্টেশনকেন্দ্রিক যাতায়াত করত। যাতায়াত রেলনির্ভর থাকায় কিছুদিন আগেও এই স্টেশন দুটিতে প্রচুর মানুষ ওঠানামা করত বলে স্থানীয়রা জানান। এখন দিনকে দিন কমছে এই দুটি রেলওয়ে স্টেশনের গুরুত্ব। ট্রেনের সংকট, শিডিউল বিপর্যয়সহ নানা সমস্যার কারণে যাত্রী পাচ্ছে না স্টেশন দুটি। এ কারণে স্টেশন দুটির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসছে। অন্যদিকে  সড়কপথে যানজট থাকলেও বাসে আগ্রহ যাত্রীদের।

কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার বিদেশি ও দেশি পরমর্শক দ্বারা মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বিআরটি বাস্তবায়ন করছে, যার পেছনে খরচ হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। অথচ ঢাকার আশপাশের শহরের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে রেল যোগাযোগ খুব উপযুক্ত ছিল। কিন্তু এখন ঢাকা শহরের ট্রেনস্টেশনগুলো মৃতপ্রায়। এগুলোর অবকাঠামো নেই, স্টেশনকেন্দ্রিক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নেই, ট্রেন থামে না, বগির সংখ্যা কম, শিডিউল বিপর্যয়সহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ জন্য মানুষ এখন রেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যার কারণে সড়কপথে যানজট থাকলেও মানুষ যাতায়াতে বাসে ভরসা করছে। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আরএসটিপি অনুযায়ী ঢাকার চার পাশের জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি করতে রেল যোগাযোগব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। অথচ সরকার মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। এই রেল যোগাযোগকে আরও উন্নত করে ৩০ মিনিট পরপর কমিউটার ট্রেন চালু করা যেত। এতে খরচ অনেক কম হতো। একই সঙ্গে অনেক মানুষ যাতায়াত করতে পারত। সরকার যদি আরএসটিপি বাস্তবায়ন করত তাহলে আমাদের যোগাযোগব্যবস্থা অনেক উন্নত হতো।’

সরেজমিন বনানী রেলস্টেশন : রাজধানীর বনানী রেলস্টেশন শুধু নামেই। ট্রেনযাত্রীদের জন্য এতটুকু সুযোগ-সুবিধা সেখানে নেই। দিনে মাত্র একটি ট্রেন থামে। কিন্তু কোনো যাত্রী উঠতে পারেন না প্ল্যাটফরম নেই বলে। আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়। তবে সেই ট্রেনের যাত্রী ওঠে অন্য স্টেশন থেকে। রেলে কোনো সংকেতব্যবস্থাও নেই বনানীতে। স্টেশনের লোকজন জানান, এই স্টেশনে সংকেতব্যবস্থা না থাকায় তারাও এসব ঠিকমতো বলতে পারেন না। প্ল্যাটফরমে কয়েকজন যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। রফিক আহমেদ প্রায় দিনই কমলাপুর থেকে কমিউটার ট্রেনে করে জয়দেবপুরে বাড়ি যান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বনানীতে কাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়ার সুবিধা হবে ভেবে এসে বিপদে পড়েছি। স্টেশনে এসে জানতে পারলাম এখানে ট্রেন থামে না।’ আবদুল আহাদ নামের এক যাত্রী জানান, তিনি আন্তনগর ট্রেনের টিকিটের জন্য এসেছেন। তবে এই ট্রেন বনানীতে থামবে না। তিনি উঠবেন বিমানবন্দর স্টেশন থেকে। তিনি বলেন, আন্তনগর ট্রেনগুলো বনানী রেলস্টেশন থেকে যাত্রী ওঠালে গুলশান, বনানী, মহাখালীসহ আশপাশের মানুষের অনেক উপকার হতো। আবার সব লোকাল ট্রেন যদি এই স্টেশনে থামে তাহলে উত্তরা-জয়দেবপুরের লোকজন সহজে আসতে পারবে। অনেক মানুষ গুলশান ও আশপাশের এলাকায় চাকরি করে। তারা সহজেই এই স্টেশনটি ব্যবহার করতে পারত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনানী স্টেশনের এক কর্মচারী জানান, এখানে লোকাল ট্রেন ‘তুরাগ’ ছাড়া আর কোনো ট্রেন থামে না। তাও এই ট্রেনের বগির সংখ্যা থাকে খুবই কম। আর কমলাপুর থেকে ট্রেন যাত্রী পূর্ণ করে আসে। এই স্টেশনে ১৫-২০ জনের মতো যাত্রী থাকে। অনেকে উঠতে পারে আবার অনেকে পারে না। তবে এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ বাসে করে চলে যায়।

তেজগাঁও রেলস্টেশন : তেজগাঁও রেলক্রসিং এলাকা থেকে সরু একটা রাস্তা দিয়ে ৩০০ মিটার এগোলে উত্তরদিকে তেজগাঁও রেলস্টেশন। এই স্টেশনের ওপর দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কারণে স্টেশনটি আড়ালে পড়ে গেছে। প্রধান ফটকের সামনে ভাসমান লোকজন শুয়ে-বসে আছে। প্ল্যাটফরমে বসার কোনো জায়গা বা বিশ্রামাগার নেই। জনবল সংকট। টয়লেট নেই। স্টেশনে আসার সড়কটিও খুব সরু। আশপাশের এলাকা থেকে আসার মতো যোগাযোগ তেমন ভালো নেই। কয়েকটি লোকাল ট্রেন থামলেও আন্তনগর কোনো ট্রেন থামে না স্টেশনে। এরপরও কারওয়ান বাজার কাছাকাছি হওয়ায় কিছু মানুষ যাতায়াত করে এই স্টেশন থেকে। প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন যাত্রী। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই স্টেশনে বিভিন্ন গন্তব্যের লোকাল ট্রেন থামে। প্রচুর যাত্রীচাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্ল্যাটফরমে যাত্রীসেবার কিছুই নেই। বসার স্থান নেই, টয়লেট সুবিধাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে তেজগাঁও রেলস্টেশনের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, তেজগাঁও স্টেশনের পাশে কলার আড়ত, মুরগির দোকানসহ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কারণে দোকানগুলো সরে গেছে। এ কারণে ব্যবসায়ী লোকজনের এখন ট্রেনকেন্দ্রিক যাতায়াত কমে গেছে। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে এই স্টেশনের পুনঃসংস্কার কাজ শুরু হবে। তখন যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর