শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪৯০ স্থানে বসবে সিসি ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪৯০ স্থানে বসবে সিসি ক্যামেরা

উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশেও গড়ে তোলা হচ্ছে উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থা। ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে বাংলাদেশের হাইওয়ে পুলিশও। সেভ সিটির আদলে হবে সেভ হাইওয়ে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে হাইওয়ে পুলিশও তাল মিলিয়ে চলবে উন্নত দেশের পুলিশের সঙ্গে। তারই অংশ হিসেবে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৬৫ কিলোমিটার এলাকায় বসছে ১ হাজার ৪৭১টি সিসিটিভি ক্যামেরা।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশদ্বার সিটি গেট থেকে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত বসানো হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১ হাজার ৪৭১টি সিসিটিভি ক্যামেরা। মহাসড়কের যাত্রীদের নিরাপত্তা, যান চলাচল নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি দুর্ঘটনা ও অপরাধ প্রতিরোধে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের অধীনে ২০২১ সালের ২৩ জুন মহাসড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মহাসড়কে ক্যামেরা বসাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমোদন, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ডাটা প্রবাহের জন্য বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের চুক্তিও হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি গেট থেকে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ দুটি রেঞ্জে বিভক্ত। সিটি গেট থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজা পর্যন্ত কুমিল্লা রেঞ্জ। দাউদকান্দি থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত গাজীপুর রেঞ্জ। মহাসড়কে লাগানো ৪৯০টি পোল (ক্যামেরা লাগানোর খুঁটি) ৫টি মনিটরিং সেন্টার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। একটি সেন্টারে ডাটা রেকর্ড হবে। ৪৭৪টি খুঁটি গাড়ি ও চালক শনাক্ত করবে, ১৬টি চেকপয়েন্ট খুঁটি থাকবে, যেগুলো বেপরোয়া গতি শনাক্ত করবে। ক্যামেরা থেকে ডাটা রেকর্ডের জন্য মেঘনাঘাট এলাকায় একটি দ্বিতল ডাটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। একতলায় একটি ডাটা সেন্টার এবং অন্য তলায় একটি মনিটরিং সেন্টার থাকবে। এ ছাড়া গাজীপুর রেঞ্জে একটি মনিটরিং সেন্টার ও কুমিল্লা রেঞ্জে চারটি মনিটরিং সেন্টার হবে। কুমিল্লা রেঞ্জের দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা, মেঘনাঘাট, কুমিল্লা রেঞ্জ কার্যালয় ও বারো আউলিয়া হাইওয়ে থানায় একটি করে মনিটরিং সেন্টার হবে। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি গেট থেকে ঢাকার সাইনবোর্ড বাজার পর্যন্ত সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে অপরদিকে মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা আশাবাদী আগামী বছরের মাঝামাঝি এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সড়কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চিহ্নিত করা, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে থাকবে’। হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি ও প্রকল্প পরিচালক বরকতুল্লাহ খান বলেন, ‘এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে পুলিশও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারবে। মহাসড়কে গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাকে চুরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই চুরিও বন্ধ হবে।

পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ থাকুক বা না থাকুক যদি কোনো যানবাহনের সামান্য ক্লু দেওয়া হলে সে গাড়ি আমরা সিসি ক্যামেরার সাহায্যে শনাক্ত করতে পারব। এই প্রকল্পে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পিটিএস ড্রোন ক্যামেরা, বুলেট ক্যামেরা ও লং ভিশন ক্যামেরা যুক্ত হবে। এতে করে যে কোনো ধরনের অপরাধ, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব হবে। আধুনিক প্রযুক্তির এই সিস্টেম উন্নত দেশগুলো ব্যবহার করে আসছে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরে এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৭০-৮০টি দেশে এই সিস্টেম ব্যবহার হচ্ছে। আমরা প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করেছি। তবে আমরা আশাবাদী প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে তার উদ্বোধন করবেন বলে আশাবাদী।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী এনে তিন বছর টেকনোলজি সাপোর্ট দেবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের নিজস্ব কর্মী তৈরি করব।

সর্বশেষ খবর