মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে শীতলপাটি

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

হারিয়ে যাচ্ছে শীতলপাটি

ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে প্লাস্টিকের পাটির কারণে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য শীতলপাটি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী  উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নে পাটিতাপাড়া গ্রামে এক সময় শীতলপাটি তৈরি হতো। গরমে প্রশান্তির পরশ পেতে শীতলপাটির জুড়ি নেই। গরমের সময় কদর বাড়ে এখানকার শীতলপাটির। শীত শেষের সঙ্গে সঙ্গেই শীতলপাটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন শীতলপাটির কারিগররা। গরমের কয়েক মাস এই পাটির কদর বাড়ে। তাই কাজের ব্যস্ততাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এ সময় শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও শীতলপাটি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে।

আগের তুলনায় শীতলপাটির কদর কম হলেও থেমে নেই তাদের পাটি বিক্রির কাজ। শীতলপাটি বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। উপজেলার পাটিতাপাড়ায় এখনো প্রায় কয়েকটি পরিবার তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন কিন্তু বেতের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরির পাশাপাশি পুঁজির অভাবে আজ এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। পাটিশিল্পের কারিগর  ও বিক্রয় প্রতিনিধি নিতাই দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অঞ্চলের শীতলপাটি বহুকাল ধরেই দেশে-বিদেশে সমাদৃত। এখানকার শীতলপাটির চাহিদাও প্রচুর। কিন্তু কালের বিবর্তন এখন আর শীতলপাটি তৈরি হয় না। বর্তমানে বগুড়া জেলা থেকে এনে বিক্রি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। আজ পুঁজির অভাবে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। করোনার আগে ভালোই কাটছে বেচা-বিক্রি কিন্তু করোনাকালীন বেচা-বিক্রি না থাকায় পুঁজি ভেঙে খাওয়ায় আমরা এখন দেউলিয়া হয়ে গেছি। অনেকেই এই পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যারাও আছেন তারা ঋণে জড়িয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগ না নিলে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পাটিশিল্প। তীব্র তাপেও খুব গরম হয় না বলেই এই পাটিকে শীতলপাটি বলা হয়। উপজেলার পাটিতাপাড়ার শীতলপাটির  শিল্পী দিলীপ কুমার বলেন, শীতল পাটি তৈরিতে মুস্তাক গাছ ব্যবহার হয়। এটি স্থানীয়ভাবে পাটি বেত নামে পরিচিত। এক ধরনের বর্ষজীবী উদ্ভিদের কাণ্ড থেকে বেতি তৈরি করা হয়। পরিপক্ব পাটিগাছ কেটে পানিতে ভিজিয়ে তারপর পাটির বেতি তোলা হয়। এরপর ভাতের মাড় ও পানি মিশিয়ে বেতি জ্বাল দেওয়া হয়। ফলে বেতি হয়ে ওঠে মসৃণ ও সাদাটে। বেতির ওপরের খোলস থেকে শীতলপাটি, পরের অংশ তুলে বুকারপাটি এবং অবশিষ্ট অংশ চিকন দড়ি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। নিতাই দে বলেন, এখন আগের মতো শীতলপাটি বিক্রি হয় না। এ কারণে পাটি বানিয়ে লাভও কম হয়। তাই বাধ্য হয়ে বগুড়া থেকে কিনে এনে বিক্রি করি। অন্যদিকে এই কাজে আগের মতো লোকও পাওয়া যায় না। আমি দীর্ঘদিন এই পেশার সঙ্গে আছি, তাই ছাড়তে পারছি না। প্রতিদিন গড়ে একটি বা দুটি পাটি বিক্রি করি। যা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে যাচ্ছে। তবে এই পাটি যদি ব্যাপকভাবে কেউ তৈরি করে বিক্রি করেন তাহলে অনেক লাভের সম্ভাবনা আছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর