শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
ঘন কুয়াশা

ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রতিদিন ডেস্ক

ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন

সারা দেশে শৈতপ্রবাহের কারণে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন রাজধানীর আকাশ। ঘড়ির কাঁটায় বেলা সাড়ে ১১টা অতিক্রম করলেও মেলেনি সূর্যের দেখা। ছবিটি গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সারা দেশে নেমে এসেছে তীব্র শীত। একই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশা। এ কারণে দেশের অনেক অঞ্চলেই গতকাল সূর্যের দেখা মেলেনি। প্রচ- ঠান্ডায় জনজীবনে বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ঘণ্টায় শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের তীব্রতা ছিল প্রচ-। তাপমাত্রার তুলনায় শীত বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ উত্তরের হিমেল বাতাস। দেশজুড়ে এমন বাতাস বইতে পারে আরও কয়েক দিন। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি জানুয়ারিতে দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। তবে তীব্রতার সম্ভাবনা বেশ কম। সূত্র জানায়, বর্তমানে উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এখন যে তাপমাত্রা রয়েছে, তা এই সময়ের জন্য স্বাভাবিক। তবে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দেশের ওপর দিয়ে হিমেল হাওয়া বইতে থাকায় এখন শীত তুলনামূলক বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা যতটা কমেছে, তার চেয়ে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি  সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী শীতের শহর শ্রীমঙ্গলে জেঁকে বসেছে শীত। টানা দুই দিন ধরে এই উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। বাতাসে বইছে হিমেল হাওয়া। ভোরের কুয়াশা কেটে সূর্ষের দেখা মিললেও রোদের কোনো তেজ ছিল না। সন্ধ্যা নামতেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এ উপজেলা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল শীতের তীব্রতা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সনি কুমার সাহা বলেন, এখন প্রতিদিনই ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। এর মধ্যে শিশুরাই বেশি রয়েছে।

এদিকে টানা দুই সপ্তাহ ধরে কুয়াশায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথেও ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গত ১৩ দিনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রায় ৭৫ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ ছিল। আরিচা-কাজিরহাট রুটে ১০ দিনেই বন্ধ ছিল ৮৫ ঘণ্টা। যথা সময়ে যানবাহন নদী পাড়ি দিতে না পারায় দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্য রাত পৌনে ৩টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ দুই ঘাটে ফেরিগুলো যানবাহন বোঝাই করে নোঙরে থাকে। প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট রুটেও মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে ভারী কুয়াশা পড়তে থাকলে এই রুটে ফেরি চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। একপর্যায়ে সামনের সামান্য দূরের কিছুই দেখা না গেলে রাত ২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিলেট বিভাগজুড়েও লেগেছে পৌষের শীতের কাঁপন। বইছে শৈত্যপ্রবাহ। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের লোকজন। বিশেষ করে মৌলভীবাজারের পাহাড়ি এলাকা ও সুনামগঞ্জের হাওড়াঞ্চলের অসহায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তীব্র শীতে চা-বাগানের শ্রমিক, হাওড়াঞ্চলের জেলে, কৃষক ও শ্রমজীবী লোকজন বিপাকে রয়েছেন। শীত উপেক্ষা করেই তাদের খুব সকালে কাজের তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। এ ছাড়াও সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও পড়েছেন শীতের কবলে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় পর্যটকরা হোটেল বা রিসোর্টের কক্ষেই বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছেন। একইভাবে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে রাজশাহী। কুয়াশার কারণে ল্যাম্পপোস্টের আলো সড়কে ছড়াতে পারেনি। ঘন কুয়াশা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ কামাল উদ্দিন জানান, শীতের তীব্রতা ও কুয়াশার দাপট আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সিরাজগঞ্জে এক সপ্তাহ ধরে জেলায় শীতের তীব্রতা শুরু হয়েছে। ঠান্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে ছিন্নমূল মানুষগুলোকে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে পথেঘাটে থাকা মানুষগুলো দুর্বিসহ দিন পার করছেন। শীত ও ঘন কুয়াশায় কাবু হয়ে পড়েছে লালমনিহাটের জনজীবন। জেলাজুড়ে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার সঙ্গে যুক্ত হওয়া শৈত্যপ্রবাহে অনেকটাই বিপাকে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। কয়েক দিন থেকে শুরু হয়েছে হাড়কাঁপানো শীত। ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে পুরো এলাকা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায়ও সূর্যের দেখা মেলেনি। কুড়িগ্রামেও ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুই দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলেও তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু জনদুর্ভোগ এখনো চরমে রয়েছে। প্রতিদিন বিকাল থেকে পরদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘন কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। একই সঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর