শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

৪০ নারীর প্রেমিক মাসুম ফারদিন

আলী আজম

গাজীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি রহমত আলীর ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতেন ওই ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ৪ লাখেরও বেশি ফলোয়ার। এটি সত্য প্রমাণ করতে বিভিন্ন হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে নিয়মিত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করতেন। আর এতেই একের পর এক নারীর সঙ্গে প্রেম ও পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। তার নাম মাসুম বিল্লাহ ফারদিন ওরফে রাজু উল্লাহ ওরফে রাজু। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে তার প্রতারণা। কিছুদিন প্রেমের সম্পর্ক না যেতেই বিভিন্ন বাহানায় হাতিয়ে নিতে থাকেন মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে কমপক্ষে ৪০ জন নারীকে প্রেম-পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে হাতিয়েছেন কোটি টাকা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এক ভুক্তভোগীর করা মামলার ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম-উত্তর বিভাগ। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়ে ফেসবুক আইডি অলংকৃত করে সুন্দরী মেয়েদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন ফারদিন। মেয়েদের আকৃষ্ট করতে ফেসবুকে ৪ লাখ ফলোয়ার বানান। কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে সাড়া দিলে হাই কিংবা হ্যালো শুরু করে নিজেকে সাবেক এমপি রহমত আলীর দ্বিতীয় ঘরের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ ছাড়া প্রেমের ফাঁদে ফেলতে মেয়েদের দামি গিফট পাঠাতেন ফারদিন। কেউ প্রেমের ফাঁদে পা দিলে নিয়মিত পাঁচ তারকা হোটেলে লাঞ্চ ও ডিনারের জন্য নিয়ে যেতেন। শপিং করে দিতেন নামিদামি শপিং মল থেকে। ধনাঢ্যদের বউদের পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে নিয়মিত সিসা বার ও স্পা সেন্টারে গিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় কাপল স্পা নিতেন। কখনো কখনো ঘুরতে নিয়ে হোটেল ও রিসোর্টে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতেন। এর পরই সুকৌশলে প্রতারণা শুরু করতেন ফারদিন। বিদেশে পাঠানো, সরকারি চাকরি দেওয়া, বদলির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন তিনি। এ জন্য তিনি বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাগজপত্র ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে এডিট করে নিজের নামের সঙ্গে পছন্দের পদবি বসিয়ে ভুক্তভোগীদের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতেন। ডিবি জানায়, শুধু এমপির ছেলে হিসেবে নয়, ফারদিন নিজেকে মন্ত্রীর ভাই, কণ্ঠশিল্পী, পুলিশের ভাই, পুলিশের স্বামী, সেনা কর্মকর্তার স্বামী, ট্যুরিজম বোর্ডের এক্সিকিউটিভ, বিপিএলের ফ্রাঞ্চাইজি ফরচুন বরিশালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের যুগ্ম-মহাসচিব, একটি পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সদস্যসহ ২১টি পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা করেছেন। ফারদিনের বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলায় এক ভুক্তভোগী নারী উল্লেখ করেছেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ফারদিন তাকে বড় বোন বানিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে ফারদিন নিজেকে এমপির ছেলে পরিচয় দিয়ে জাইকা প্রজেক্টের আওতায় জাপান পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ফারদিনের প্রতারণার বিষয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম-উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফউল্লাহ বলেন, আড়াই বছর বয়স থেকে হাজারীবাগে এক নিঃসন্তান পরিবারে বেড়ে ওঠা ফারদিন মাত্র ১২ বছর বয়সে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম নওগাঁ সদর থানার একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। এরপর বিভিন্ন পরিচয়ে নারীদের সঙ্গে প্রেম-পরকীয়ার সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা করতে থাকেন। তার প্রতারণার শিকার এক নারীর করা মামলায় বুধবার গুলশান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিভিন্ন প্রতারণায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে আকর্ষণীয় ফেসবুক আইডি রিকোয়েস্ট গ্রহণ না করা; অবৈধভাবে চাকরি, বদলি বা বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকার লেনদেন না করা এবং বাইরের চাকচিক্য দেখে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব না করার আহ্বান জানান ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ আশরাফউল্লাহ।

সর্বশেষ খবর