মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের প্রতারণা ঠেকাতে নতুন আইন

♦ গঠন করা হবে পৃথক ডিজিটাল কমার্স কর্তৃপক্ষ ♦ নিবন্ধন ছাড়া ওয়েবসাইট ফেসবুক পেজ পরিচালনায় ১ বছর কারাদণ্ড জরিমানা ৫ লাখ ♦ জুয়া, বেটিং লটারি করলে তিন বছরের কারাদণ্ড জরিমানা ৩ লাখ ♦ অনলাইন বিক্রেতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা দেওয়া যাবে না ♦ নির্ধারিত সময়ে পণ্য না দিলে তিন গুণ জরিমানা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশে ব্যবসারত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা ঠেকাতে ‘ডিজিটাল কমার্স অ্যাক্ট-২০২৩’ নামে একটি নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার; যেখানে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, কিউকমের প্রতারণার ঘটনাগুলোর বিচার (ভূতপূর্ব) করার ধারা সংযুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায়, অনলাইন বাণিজ্যে অনিয়ম-তদারকি করতে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। খসড়া আইনে ডিজিটাল বাণিজ্যের লক্ষ্যে নিবন্ধন ছাড়া ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ পরিচালনা করলে এক বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বিক্রেতা কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে পণ্য বা সেবা সরবরাহ করতে না পারলে নির্ধারিত মূল্যের তিন গুণ জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ই-কমার্স সেল নতুন আইনের যে খসড়া তৈরি করেছে, সেখানে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত কোম্পানিকে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতার কোনো ধারা যুক্ত করা হয়নি। ফলে এরই মধ্যে লাখ লাখ গ্রাহক যারা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে, তাদের শত শত কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি কোনো সহায়ক আইন হবে কি না সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ কিউকম, আলেশা মার্ট, দালালপ্লাস, বুমবুম, ধামাকাসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার জন্য যেসব মামলা হয়েছে তার বেশির ভাগই জিআর এবং মানি লন্ডারিং আইনে করা হয়েছে। এ ধরনের আইনে প্রতারণার শাস্তি, টাকা পাচার বা আত্মসাতের বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। ভোক্তা অর্থ ফেরত পাবে কি না সেটি এসব আইনে স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে নতুন আইনটি যেহেতু এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে, সেখানে ভোক্তার অর্থ ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা এবং ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের প্রতারণার ঘটনাগুলোর যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার ধারা যুক্ত করা উচিত হবে। আগের প্রতারণার অভিযোগে নতুন আইনে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের বিচার করা যাবে কি না- জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বিষয়টি আমরা এখনো আইনের খসড়ায় যুক্ত করিনি। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত পেলে ভূতপূর্ব অপরাধের শাস্তির বিধানটি যুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত সেগুলোকেও নতুন আইনে শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। একইভাবে অর্থ ফেরতের বাধ্যবাধকতার বিষয়েও একাধিক ধারা আইনে যুক্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।

যা আছে নতুন আইনের খসড়ায় : প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় মূলত ডিজিটাল ব্যবসার জন্য নিবন্ধন গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে; আইনটি বাস্তবায়ন ও অনিয়ম তদারকি করতে একটি ডিজিটাল কমার্স কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা উল্লেখ আছে যেখানে একজন মহাপরিচালক ও তিনজন পরিচালক কাজ করবেন; অনলাইনে পণ্য বিক্রয় ও সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠানকে এ আইনের আওতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত বিজনেস আইডেনডিটি নিবন্ধন নিতে হবে; ডিজিটাল বাণিজ্যের পণ্য পরিবহন ও সেবা পৌঁছানোর জন্যও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস আইনে নিবন্ধন নিতে হবে; যে কোনো গ্রাহক তার সুবিধামতো ক্যাশ অন ডেলিভারি বা অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করতে পারবে; গ্রাহক কর্তৃক অগ্রিম মূল্য পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত যে কোনো ক্রেডিট কার্ড অথবা ডেবিট কার্ড, ডিজিটাল ফান্ড ট্রান্সফার বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবে; কোনো অবস্থাতেই অনলাইন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে সরাসরি অগ্রিম টাকা পরিশোধ করা যাবে না; কোনো গ্রাহক পণ্য বা সেবা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত বা পণ্যের মান গ্রাহক কর্তৃক গৃহীত না হলে এবং পণ্য ফেরত দেওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগ পর্যন্ত পরিশোধিত মূল্য বিক্রেতার কাছে হস্তান্তর করা যাবে না; প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে একই পণ্য সর্বোচ্চ পাঁচটি ও শৌখিন পণ্য সর্বোচ্চ দুটির বেশি কেনা যাবে না; শৌখিন পণ্য ১ হাজার টাকা মূল্যের নিচে হলে সর্বোচ্চ পাঁচটি কেনা যাবে; নিবন্ধিত কোম্পানি দেশে ও দেশের বাইরে পণ্য ও সেবা বিক্রি করতে পারবে; দেশের বাইরে থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি নীতি আদেশ এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিপত্র অনুসরণ করতে হবে।

খসড়া আইনে শাস্তির আওতা : পণ্য বা সেবা সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড; বাংলাদেশের কোনো আইনে নিষিদ্ধ পণ্য বা সেবা বিক্রি বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে, কোনো অনলাইন জুয়া, বেটিংয়ের আয়োজন করলে তিন বছর কারাদণ্ড, ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় শাস্তি; অনুমতি ছাড়া লটারি আয়োজন, ডিজিটাল ক্যাশ ওয়ালেট, ক্যাশ ভাউচার তৈরি ও বিক্রির জন্য ছয় মাসের দণ্ড, ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড; নিবন্ধন ছাড়া কোনো ফেসবুক পেজ প্রদর্শন করলে এক বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর