রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী, কৌশলী বিএনপি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী, কৌশলী বিএনপি

তত্ত্বাবধায়ক নাকি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলেও খুলনার বিভিন্ন সংসদীয় আসনে নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। কয়েকটি আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা, নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজেদের তুলে ধরছেন প্রার্থীরা।

অন্যদিকে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত করছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি, খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির নানা ইস্যুতে জনমত তৈরি করছে বিএনপি। তারা বলছে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। তাদের অবস্থান অনেকটা কৌশলী।

জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে বড় দুই রাজনৈতিক জোটের হয়ে নতুন-পুরান মিলে তিন ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী তৎপরতা শুরু করেছেন। ফলে দুই দলের মনোনয়ন বণ্টন অনেকটা কঠিন হতে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

খুলনা-১ : দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি ‘আওয়ামী লীগের দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯ সালে বিএনপির সৈয়দ মোজাহিদুর রহমান ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাকি নয়বার আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখানে নির্বাচন করে জয়ী হন। এবার সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল ম ল, জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায়, বিএনপির আমীর এজাজ খান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবু সাঈদ। তবে এ আসনে শেখ পরিবারের কেউ নির্বাচন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

খুলনা-২ : সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত খুলনা-২ ‘মর্যাদার আসন’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী ও ২০০১ সালে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। আগামী নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। এরই মধ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বর্তমান আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, সিপিবির এইচ এম শাহাদাৎ প্রার্থী হতে পারেন।

খুলনা-৩ : শ্রমিক অধ্যুষিত খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী থানা এলাকা নিয়ে গঠিত আসনে আওয়ামী লীগের মন্নুজান সুফিয়ান ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনবার বিজয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক করেন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। অন্যদিকে বিএনপির মহানগরী আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রকিবুল ইসলাম বকুল, মহানগরী বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোজ্জাম্মিল হক, জাতীয় পার্টির সাবেক নগর সভাপতি আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস প্রার্থী হতে পারেন।

খুলনা-৪ : কৃষিনির্ভর রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে উন্নয়নের আশায় জনগণ কখনও আওয়ামী লীগ, কখনও বিএনপি প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী ও বিএনপির আজিজুল বারী হেলাল প্রার্থী হতে পারেন।

খুলনা-৫ : আওয়ামী লীগের দখলে থাকা ডুমুরিয়া-ফুলতলা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৫ আসনটিতে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার জয়লাভ করে চমক সৃষ্টি করেন। কিন্তু ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ হ্যাটট্রিক জয় করেন। এবার নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. এম মাহাবুব উল ইসলাম, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবদুল গনি মোল্লাহ, বিএনপির গাজী আবদুল হক, মফিজুল ইসলাম ও জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রার্থী হতে পারেন।

খুলনা-৬ : প্রত্যন্ত কয়রা-পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে বিএনপি কখনই জয়লাভ করেনি। ১৯৭৯ থেকে মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এখানে বিজয়ী হয়েছেন। এবার বর্তমান সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রেমকুমার প্রার্থী হতে পারেন। জোটগত নির্বাচন হলে জামায়াতকে আসনটি ছাড়তে হবে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে জামায়াতের মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর