শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফাল্গুনময় মেলাপ্রাঙ্গণ

মোস্তফা মতিহার

ফাল্গুনময় মেলাপ্রাঙ্গণ

বসন্ত আর ভালোবাসার উচ্ছ্বাসের ধারাবাহিকতা গতকাল অমর একুশে বইমেলার ১৫তম দিনেও অব্যাহত ছিল। ফাগুনের দ্বিতীয় দিনেও ছিল ফাগুনের ছোঁয়া। এ দিনও বাসন্তী রঙের ছড়াছড়িতে মেলাপ্রাঙ্গণ ছিল ফাল্গুনময়। বিকাল ৩টায় মেলার প্রবেশদ্বার খোলার পর ছিমছাম ছিল মেলার পরিবেশ।

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা আসার পর দর্শনার্থীর ভিড় জমতে থাকে মেলাপ্রাঙ্গণে। ফাল্গুনী উচ্ছ্বাসে এ সময় মেলার পরিবেশে ফুটে ওঠে শৈল্পিকতা। এ দিনের মেলায় আগত দর্শনার্থীদের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুবই কম। তবে শুক্রবার থেকে মেলা নতুন করে জমে উঠবে এবং পাঠকের ব্যাপক সমাগম ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন বেশির ভাগ প্রকাশক।

এদিকে স্টলগুলোর সামনে ভিড় না থাকলে প্যাভিলিয়নগুলোয় ছিল বইপ্রেমী ক্রেতার জটলা। বিশেষ করে অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, তাম্রলিপি, আগামী, সময়, অন্বেষা, কাকলী, অবসর, পাঞ্জেরী, নালন্দার সামনে ক্রেতাদের ভিড় ছিল উল্লেখ করার মতো। ডিজিটালের ভিউ আর ভাইরালের যুগে মূলধারার সাহিত্যের পাঠক কমে গিয়ে ফেসবুক সেলিব্রেটিদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনেক প্রকাশক বাণিজ্যিকতা ও মুনাফাকে প্রাধান্য দিয়ে ঝুঁকে পড়েছেন ফেসবুক সেলিব্রেটি টাইপের লেখকদের প্রতি। এতে করে মানসম্পন্ন উচ্চমার্গীয় সাহিত্য চরমভাবে মার খাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন প্রকাশক। প্রকাশকদের বেশ কয়েকজন বলেন, শব্দচয়ন ও বাক্য গঠন ঠিক না থাকলেও আজকাল অনেকেই লেখক হয়ে যাচ্ছেন। আর তাদের ফ্যান ফলোয়াররা সেসব দেদার কিনছে বলে সাহিত্যের অঙ্গন শুধু ক্ষতিগ্রস্তই নয় কলুষিতও হচ্ছে। আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রকাশকদের কয়েকজন আরও বলেন, এজন্য আমরা মানে আমাদের প্রকাশকরাই দায়ী। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলা সাহিত্য ও সাহিত্যের গুণীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছি। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। কী ধরনের বই প্রকাশ করা যাবে আর কী ধরনের বই প্রকাশ করা যাবে না এক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি কর্তৃক সঠিক নীতিমালা থাকা উচিত।

বাংলা একাডেমির জনসংযোহ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ১৫তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৪টি। আর গত ১৫ দিনে মেলায় মোট নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৫৭৯টি।

উম্মে হাবিবা প্রীতিলতা : শিলা প্রকাশনী থেকে এবারের মেলায় এসেছে কবি উম্মে হাবিবা প্রীতিলতার কাব্যগ্রন্থ ‘বকুল সুবাসে’। বইটি কবিতাপ্রেমী পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক। শিরোনাম ছাড়া ৫৬টি গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বইটি। কবির প্রচ্ছদে ৪৪ পৃষ্ঠার এই বইটির দাম রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা।

শিবলী কায়সারেরকৃষ্ণপক্ষের দিনরাত্রি : ছায়াবীথি প্রকাশনী থেকে এবারের মেলায় এসেছে লেখক শিবলী কায়সারের গল্পের বই ‘কৃষ্ণপক্ষের দিনরাত্রি’। কয়েকটি ছোট গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। মানব মনের বিচিত্র বিশ্লেষণ, সময় ও পরিস্থিতির প্রয়োজনে ক্ষণে ক্ষণে মানুষের মনের পরিবর্তন, জীবিকার প্রয়োজনে, স্বার্থের আস্ফালনে গল্পগুলোর মূল সুর। তথাকথিত অগ্রগতির প্রয়োজনে, স্বার্থের টানে, অর্থের প্রয়োজনে বিভিন্ন ভূমিকায় মানুষের চরিত্র ফুটে উঠেছে বইটির গল্পগুলো। বইটির দাম ২২৫ টাকা।

জমির উদ্দিন মিলনের দুটি বই : প্রকাশনা সংস্থা চন্দ্রছাপ প্রকাশ করেছে প্রতিশ্রুতিশীল কথাসাহিত্যিক জমির উদ্দিন মিলনের দুটি বই। এর মধ্যে একটি অনুবাদের বই, অন্যটি গল্পের। অনুবাদের বইটির নাম ‘ডেথ ইজ ইনভিট্যাবল’। আগাথা ক্রিস্টির লেখা থেকে পুরো বইটি অনুবাদ করেছেন লেখক। অন্যটি লেখকের গল্পগ্রন্থ ‘নিঃসঙ্গ ছিল তাঁর মৃত্যু’। বই দুটির বিক্রি নিয়ে আশাবাদী প্রকাশক মোস্তফা কামাল।

মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশ নেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম এবং সরকার আশরাফ। সভাপতিত্ব করেন সাজ্জাদ আরেফিন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মোহাম্মদ সাদিক, কামরুল হাসান, সাজ্জাদ আরেফিন, টিমুনী খান রীনো, কৌমুদী নার্গিস। আবৃত্তি করেন আফতাব আহমেদ মাহাবুব, পলি পারভীন, কাজী মদীনা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্কেচ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ এবং ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’। একক সংগীত পরিবেশন করেন লীনা তাপসী খান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, মাহবুবা রহমান, সম্পা দাস, ডা. তাপস বোস, শহীদ কবীর পলাশ ও আফরিদা জাহিন জয়ীতা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর