বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনী উত্তাপ চান্দগাঁও বোয়ালখালীতে

♦ আলোচনায় নাছির-ছালাম ♦ নৌকার টিকিট চান সবাই ♦ মাঠে এক ডজনের বেশি প্রার্থী

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

নির্বাচনী উত্তাপ চান্দগাঁও বোয়ালখালীতে

সংসদের এক মেয়াদে এক আসনে তিনবার এমপি নির্বাচন। বাংলাদেশের নির্বাচন ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব কমই আছে। এমনটা ঘটতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-৮ আসনে। একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদে একে একে দুই এমপি মারা গেছেন। আট-নয় মাসের মধ্যে হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এর মধ্যেই ২৭ এপ্রিল এ আসনে দ্বিতীয় উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে।

বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের এ উপনির্বাচন ঘিরে আট-নয় মাসের এমপি হতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকে ব্যানার-পোস্টারও সাঁটিয়েছেন। কর্মী-সমর্থকরা এমপি হারানোর শোক ভুলে নতুন এমপি কে হচ্ছেন সেদিকেই মনোযোগী। বিএনপির আসনটিতে প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় নৌকার টিকিট কে পাচ্ছেন সেটাই এখন মূল আলোচনা। তবে ১৪ দলের শরিকদের কেউ নৌকার টিকিট পান কি না তা নিয়েও আলোচনা আছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে এমপি হন জাসদের একাংশের তৎকালীন সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেলে ২০২০ সালে উপনির্বাচনে নতুন এমপি হন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। ৫ ফেব্রুয়ারি তিনিও মারা গেলে আগামী ২৭ এপ্রিল এ আসনে আবারও উপনির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ২৭ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। প্রত্যাহারের শেষ দিন ৫ এপ্রিল। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালীর আহল্লা করলডেঙ্গা, পশ্চিম গোমদণ্ডী, পূর্ব গোমদণ্ডী, কধুরখীল, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৮ জন। এর মধ্যে বোয়ালখালীর ইউনিয়নগুলোয় ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার। বাকি ভোটাররা নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও মোহরা এলাকার।

মূলত শহর ও গ্রাম মিলিয়ে এ আসন গঠিত হওয়ায় প্রার্থিতা নিয়ে মিশ্র ভাবনা তৈরি হচ্ছে। বোয়ালখালী উপজেলা অংশের চেয়ে নগরমুখী রাজনীতিবিদরা হেভিওয়েট হওয়ায় আলোচনার ডালপালা মেলছে। নগরমুখী রাজনীতিতে জড়িত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক প্রমাণের চেষ্টা করছেন। আবার উপজেলা অংশের প্রার্থীরা চেষ্টা করছেন নিজেদের যোগ্য দাবিদার প্রমাণের। এক ডজনের বেশি নেতা মনোনয়ন-দৌড়ে শামিল হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আছেন এমপি থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া দুই নেতার স্ত্রীরাও।

এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে জোর আলোচনায় আছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম ও তাঁর ভাই ব্যবসায়ী নেতা এস এম আবু তৈয়ব। এ ছাড়া বিএনএফ থেকে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, প্রয়াত এমপি মোছলেম উদ্দিনের স্ত্রী শিরিন আহমেদ, বাদলের স্ত্রী সেলিনা খানও নৌকার টিকিট চান।

জানতে চাইলে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সবার আছে। তবে দিন শেষে দলীয় সভানেত্রী যাকে চাইবেন তিনিই নৌকার টিকিট পাবেন। আমাকে দিলে আমি জয় উপহার দেব। অন্য কেউ পেলেও তার জয় নিশ্চিত করতে কাজ করব।’ এদিকে গত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনের আগে এ আসনে ‘নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ’ নির্বাচনের প্রধান প্রতিশ্রুতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন এ সেতু এখন নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার প্রধান হাতিয়ার। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মনোনয়ন-দৌড়ে থাকা একাধিক প্রার্থী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশে এমপি পদে মনোনয়ন পেতে ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই নৌকার টিকিট পেলে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের সুজন, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুকুমার চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নেতা কামাল পাশা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা হায়দার আলী চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য বিজয় কিষান চৌধুরী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চুও মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বলেন, ১৯৮৬, ২০০১-এ দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। ২০১৮-তে দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে মনোনয়ন চাননি। নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় নেত্রী তাঁর ওপর আস্থা রাখবেন বলে তাঁর বিশ্বাস। ব্যবসায়ী সুকুমার চৌধুরী বলেন, দলীয় সভানেত্রী আস্থা রাখলে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আস্থাশীল। পাশাপাশি নির্বাচিত হলে কালুরঘাট সেতুসহ একটি আধুনিক বোয়ালখালী গড়ে তুলতে তিনি কাজ করবেন। সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান, মার্চের শেষ সপ্তাহে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দলের কেউ, নাকি শরিকদের কেউ মনোনয়ন পাবেন, তখনই সিদ্ধান্ত হবে।

সর্বশেষ খবর