শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

জীবনধর্মী ভালো সিনেমা নির্মাণ করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবনধর্মী ভালো সিনেমা নির্মাণ করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক সময় অনেকে কথা বলে, টকশো হয়, সারা দিন অনেক কথা। তো অনেক কথা বলার পরে কেউ কেউ বলবে আমরা কথা বলতে পারি না। অথচ বাংলাদেশে এখন ২ হাজার ৪৫৫টি পত্রিকা, ১৭০টি অনলাইন নিউজপোর্টাল, ১৪টি আইপি টিভি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে সবাই তো মন ভরে কথা বলছে। কথা বলতে পারল না কোথায়? কে মুখটা বন্ধ করল আমি জানি না। গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখলাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনেক কথা বলল, সরকারকে নানা রকম সমালোচনা করল। সব কথা শেষ করে তারপর বলল আমি কথা বলতে পারি না! চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জীবনধর্মী ভালো সিনেমা তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন সিনেমা দরকার বাবা-মা, ভাই-বোন, সবাই মিলে যাতে দেখতে পারে। চলচ্চিত্র এমন একটা গণমাধ্যম, যা দেশের মানুষের মনমানসিকতা বদলে আরও উন্নতমানের করে দিতে পারে। তিনি বলেন, সিনেমাগুলো যেন জীবনধর্মী হয়। সেগুলো কিন্তু মানুষকে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ মানুষ তার জীবনের প্রতিচ্ছবি সেখান থেকে পায়। একটা সিনেমা পারে একটা মানুষের জীবন পাল্টে দিতে বা একটা সমাজকে পাল্টে দিতে। সিনেমা, নাটক সব ক্ষেত্রেই কিন্তু এর একটা অবদান রয়েছে। মানুষের চিন্তা-চেতনার উৎকর্ষ ঘটাতে পারে। অন্যায়-অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে। ভালো সিনেমাগুলোর দর্শকপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত দিনে আমাদের অনেক সিনেমা তৈরি হয়েছে যেগুলো সত্যিই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। মানুষও কিন্তু সেগুলো লুফে নিয়েছে। সেভাবে আমাদের সবার কাজ করা দরকার। অশ্লীলতা ও পাইরেসি বন্ধে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও পাইরেসি বন্ধে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। সেটা হলে এগুলো বন্ধ হবে। ভালো শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শিশু চলচ্চিত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। শিশুদের জন্য ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা দরকার। শিশু চলচ্চিত্র যারা করবে তাদের ভালো অনুদান দেওয়া দরকার। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী ডলি জহুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানের সময় বাঙালিরা সিনেমা করতে পারে বা করতে পারবে, এটা পাকিস্তানিরা সব সময় অবহেলার চোখে দেখত। ১৯৫৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায়, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তখন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। তখন বাঙালিরা যেন সিনেমা তৈরি করতে পারে বঙ্গবন্ধু সেই উদ্যোগটা নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মন্ত্রী হিসেবে ১৯৫৭ সালের ২৩ এপ্রিল সংসদে আমাদের এই বাংলাদেশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন বিল, এ আইনটি পাস করেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর উদ্যোগে আইনটি পাস হয়। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংস্থা, বিশেষ করে এফডিসির কাজ শুরু হয়। সেখানে সিনেমা নির্মাণও শুরু হয়েছিল। এর আগে চলচ্চিত্র শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা গুণী শিল্পীদের হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২১ সালের সিনেমা থেকে এ বছর ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পুরস্কার দেওয়া হয়। এবারের আসরে চলচ্চিত্র শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী ডলি জহুর ও ইলিয়াস কাঞ্চন। এবার যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও ‘নোনাজলের কাব্য’। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক হয়েছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য)। সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার জিতেছে আকা রেজা গালিব পরিচালিত ‘ধর’ ও সেরা তথ্যচিত্র বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে ‘বধ্যভূমিতে একদিন’। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল) এবং যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য)।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর