শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী

কারসাজি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়েছে অসাধু চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী

দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পরিবর্তন হয়েছে কারসাজির ধরন। এক সময় রমজান ও ঈদ ঘিরে ভোগ্যপণ্য নিয়ে কারসাজি হলেও এখন পরিবর্তন হয়েছে এর ধরন-প্রকৃতি। বর্তমানে উৎসবের মাস দুয়েক আগে ঊর্ধ্বমুখী করা হয় ভোগ্যপণ্যের বাজার। উৎসব ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে করা হয় নিম্নমুখী। যাতে সবাই ধারণা পায় উৎসবের আগে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। অভিনব এ কৌশলের অংশ হিসেবে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এক সপ্তাহ ধরেই কমছে ভোগ্যপণ্যের দাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কারসাজি চক্র এখন রমজান কিংবা কোনো উৎসব ঘিরে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করছে না। তারা উৎসবের মাস দুয়েক আগেই পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ১০০ টাকা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। রমজান কিংবা অন্য উৎসবের সময় কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা আবার দাম কমিয়ে দেবে। এরই মধ্যে পণ্যের দাম কমানো শুরুও করেছে। যাতে সবাই মনে করছে রমজানের আগে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বাজার। অথচ অসাধু উপায়ে তারা ডাবল মুনাফা করছে। যা সাধারণের চোখে পড়ে না।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরেই খাতুনগঞ্জে নিম্নমুখী ভোগ্যপণ্যের বাজার। এ সময়ে কেজিপ্রতি পণ্যের রকমভেদে কমছে ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রমজান সামনে রেখে প্রচুর আমদানি হয়েছে। আমদানি করা আরও পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নেই। ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ চেইন ঠিক থাকায় নিম্নমুখী ভোগ্যপণ্যের বাজার।’

জানা যায়, এ বছরের শুরুতে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বাজার কারসাজি শুরু করে অসাধু চক্র। বাজার কারসাজিতে অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে রকমভেদে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ তার দুই মাস আগে থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট ছিল নিম্নমুখী। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঊর্ধ্বমুখী ছিল দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার। তবে খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকদের দাবি- প্রত্যাশিত এলসি খুলতে না পারায় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল আন্তর্জাতিক বাজার। তাই ওই সময় বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের দাম। এখন আমদানিকারকরা রমজান সামনে রেখে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছে। এরই মধ্যে সিংহভাগ পণ্য খালাস হয়ে চলে এসেছে পাইকারি বাজারে। খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কিছু পণ্য। আমদানি করা এসব পণ্য পাইকারি বাজারে আসা শুরু করায় নিম্নমুখী হতে থাকে ভোগ্যপণ্যের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে ৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ছোলা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ৩ হাজার টাকা। ভারত থেকে আমদানি করা ছোলা মণপ্রতি ৫০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। মোটর কেজিপ্রতি ৩ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা। মশুর ডাল কেজি ৩ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮৭ টাকা। জিরা কেজিতে ২৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ টাকা, এলাচি কেজিপ্রতি ৯০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৯০ টাকা, কিশমিশ কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা, ডাল-চিনি কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। পিয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, ১৫০ টাকা কেজি দরের রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। বিপরীতে বেড়েছে চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভোজ্য তেল মণে বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ ভোজ্য তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৭২০ টাকা। চিনি মণপ্রতি ৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯৮০ টাকায়।

সর্বশেষ খবর