মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাঠে আওয়ামী লীগ, প্রস্তুতি বিএনপিতেও

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

মাঠে আওয়ামী লীগ, প্রস্তুতি বিএনপিতেও

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকলেও সিরাজগঞ্জে এখনই বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। জেলার ছয়টি আসনেই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।

রাজপথ দখলে রেখে মাঠে নিজেদের ভিত শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাদের দাবি, উন্নয়নের চিত্র দেখে জনগণ টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাবে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ- (কাজিপুর-সদরের একাংশ) : আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত এ আসন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন প্রার্থী। জয় ছাড়াও আসনটিতে তার চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রয়াত সদস্য ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরিন সেলিম রিপন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক টি এম তাজিবুল ইসলাম তুষার।

ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন চাইতে পারেন দলের সিরাজগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন ও কাজিপুর থানার সভাপতি মাওলানা জাফর আহমদ। এ ছাড়া জাকের পার্টি ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর প্রার্থী দিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।

সিরাজগঞ্জ- (সদরের একাংশ কামারখন্দ) : জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক আসন সিরাজগঞ্জ-২। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না। আসনটিতে তিনি ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কর্মিবান্ধব প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম হোসেন আলী হাসান। এ ছাড়া প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরিন সেলিম রিপন, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ও বর্তমান পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আবদুর রউফ মুক্তা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দলের একক প্রার্থী। কোনো কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তার স্ত্রী জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদ প্রার্থী হবেন। জাতীয় পার্টির সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি আমিনুল ইসলাম ঝন্টু এ আসনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন সংগঠনের জেলা সভাপতি মুফতি মাওলানা মো. মহিববুল্লাহ এবং সহ-সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হক জিয়া।

সিরাজগঞ্জ- (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) : চলনবিল অধ্যুষিত এই আসনটি খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ডা. আবদুল আজিজ। তিনি ছাড়াও আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি ম ম আমজাদ হোসেন মিলনের কন্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হোসনে আরা পারভীন লাভলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এ টি এম লুৎফর রহমান দিলু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. হোসেন মনসুর, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাদী আলমাজি জিন্নাহ, রায়গঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইমন তালুকদার ও রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনজিত কর্মকার ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকার শীর্ষে রয়েছেন চারবারের সাবেক এমপি হেভিওয়েট প্রার্থী আবদুল মান্নান তালুকদার। এ ছাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আয়নুল হক, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর ও বিএনপির কেন্দ্রীয় গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশির মনোনয়নপ্রত্যাশী। ইসলামী আন্দোলন থেকে জেলার সহ-সভাপতি গাজী মো. আয়নুল হক ও রায়গঞ্জ উপজেলা সভাপতি মাওলানা মো. ইয়াকুব আলী মনোনয়ন চাইতে পারেন।

সিরাজগঞ্জ- (উল্লাপাড়া) : আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম। তিনি ছাড়াও এ আসনে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহেদুল হক জাহিদ, পৌর মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম ও সাবেক এমপি আবদুল লতিফ মির্জার কন্যা মুক্তি মির্জা। অন্যদিকে বিএনপি থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক এমপি এম আকবর আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহাব, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সিমকি ইমাম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কে এম শরফুদ্দীন শামসুল আলম মনোনয়নপ্রত্যাশী। ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি মুফতি আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মনসুরের নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

সিরাজগঞ্জ- (বেলকুচি-চৌহালী) : তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ দুটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত আসনটি জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের আবদুল মমিন মণ্ডল সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ছাড়াও দলের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান, ঢাকার বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন এবং চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রাকিবুল করিম খান পাপ্পু ও কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মওলা খান বাবলু। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ আলী আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন থেকে উপজেলা সভাপতি আবদুস সামাদ, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার লোকমান হোসেন, উপজেলা মুজাহিদ কমিটির সভাপতি হাজি আকবর আলী, যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ নুরুন্নবী ও জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক শহীদ আমিনের নাম শোনা যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ- (শাহজাদপুর) : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা। তিনি ছাড়াও আসনটি তার ভাই সাবেক এমপি শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চয়ন ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নেতা ড. সাজ্জাদ হায়দার খান লিটন, শাহজাদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরু, শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের স্পেশাল পিপি শেখ আবদুল হামিদ লাবলু, শাহজাদপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনির আক্তার খান তরু লোদী, প্রয়াত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসিবুর রহমান স্বপনের মেয়ে শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফেরদৌসী রহমান শান্তা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এবারো শক্তভাবে মাঠে থেকে কর্মীদের সাহস জুগিয়ে চলছেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এম এ মুহিত। এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুল ইসলাম সালাম, শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হুসেইন শহীদ মাহমুদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার ও হুমায়ুন কবিরের নাম শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের উপজেলা সভাপতি মোক্তার হোসেন, জাসদ শাহজাদপুর উপজেলা সভাপতি শফিকুজ্জামান শফি, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, উপজেলা বাসদের সদস্য আবদুল আলিম ফকির। ইসলামী আন্দোলন শাহজাদপুর উপজেলা সভাপতি আলহাজ মেছবাহ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান হোসাইনের নামও দলীয় প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর