মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
আজ আন্তর্জাতিক বন দিবস

ভালো নেই সুন্দরবন

জিন্নাতুন নূর

ভালো নেই সুন্দরবন

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। দেশের জন্য এটি স্বস্তির খবর হওয়ার কথা। তবে সরেজমিন বন ঘুরে দেখে অস্বস্তিতে পড়তে হলো। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাবে সুন্দরবন এখন ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের শিকার। আগের মতো ভালো নেই বনটি। সুন্দরবনে আসা পর্যটকবাহী বিভিন্ন বিলাসবহুল ক্রুজে একদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে অসচেতন পর্যটকরা প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ এবং প্যাকেট ফেলে বনের পরিবেশ নষ্ট করছেন। পর্যটকদের নিয়ে খুব ভোরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সুন্দরবনের গভীর খালে শব্দদূষণ করছে বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর। আর এ অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বন দিবস। সম্প্রতি সুন্দরবন ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে পর্যটকবাহী বিলাসবহুল ক্রুজের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। এসব ক্রুজে ডিজে পার্টি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। গভীর বনে নদীতে এসব ক্রুজ থেকে খাবার ও পানির বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যটকরা বিভিন্ন অপচনশীল দ্রব্যসামগ্রী ফেলছে। এসবের মাধ্যমে বনে পরিবেশ ও শব্দদূষণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এরকম চলতে থাকলে বনের জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হবে। পর্যটকরা চাইলেও তখন আর সহজে বনের পশুপাখি দেখার সুযোগ পাবেন না।

সুন্দরবনের জামতলা সি-বিচ এলাকায় পর্যটকদের অনেককে খাবারের প্যাকেট ও প্লাস্টিকের বোতল ফেলতে দেখা গেছে। ট্যুর গাইডরা এ ধরনের ময়লা সেখানে না ফেলার জন্য বললেও অনেকেই শুনছেন না। সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের কাছে একসঙ্গে ১২টি বিলাসবহুল ক্রুজ অবস্থান করতে দেখা যায়। এসব ক্রুজে থাকা যাত্রীরা রাতে বিকট শব্দে মাইকে গান বাজাচ্ছিলেন। ক্রুজের অতিরিক্ত আলোকসজ্জায় রাতের সুন্দরবনের আকাশ ও পরিবেশ অনুভব করা যায় না। জাহাজের রান্নাঘর থেকে ময়লাসহ নানা অপচনশীল দ্রব্যও নদীর পানিতে ফেলতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুন্দরবনে বর্তমানে ৫০টির বেশি যাত্রীবাহী ক্রুজ চলাচল করছে। সাধারণত একটি ক্রুজে ১০ থেকে ৭৫ জন যাত্রী পরিবহন করা যায়। ট্যুরস অ্যান্ড ট্রিপস বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সুন্দরবনের সি-পার্ল ক্রুজ-৩-এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ট্যুর গাইড জুনাইদ ইসলাম জিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটক বা ক্রুজ মালিকদের সচেতন হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে, সুন্দরবন শুধু একটি ট্যুরিস্ট স্পট না। পর্যটকদের অযৌক্তিক চাহিদা যে ক্রুজ মালিকদের পূরণ করতে হবে এমনও না। সুন্দরবনে ক্রুজে কোনো ডিজে পার্টি করা যাবে না। এখানে গানবাজনা করা যাবে না। ক্রুজে পাঠানো গাইডদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে গাইডরা সুন্দরবনকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে পারবে। সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় জাহাজ মালিক ও গাইডদের নিয়ম মানার জন্য কঠোর হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর