শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার

মূল হোতা হার্নান্দেজ সালাস গ্রেফতার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ অন্তত ১৯টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা হার্নান্দেজ সালাস মেক্সিকোতে গ্রেফতার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টম এনফোর্সমেন্ট গত বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক যোগাযোগ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে মানব পাচারকারী চক্রের মূল ব্যক্তি ও সসেডো-হুইপিও নামে এক সহযোগীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের এরই মধ্যে বিচারের জন্য ইন্টারপোলের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে মেক্সিকোর গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হার্নান্দেজ- সালাস ৬০ বছর বয়সী একজন নারী। মানব পাচারের বিচারের জন্য তিনি বিশ্বের অন্যতম ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ব্যক্তি। মানব পাচারকারী চক্র পরিচালনার জন্য এর আগে তিনি তিনবার গ্রেফতার হয়েছেন। গত ১৭ মার্চ চতুর্থবারের মতো তিনি গ্রেফতার হন। যুক্তরাষ্ট্রে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ, ইন্টারপোল, মেক্সিকোর অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাজা ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোয় অভিযান চালিয়ে হার্নান্দেজ- সালাসকে গ্রেফতার করে। অভিবাসীদের লক্ষ্য করে হার্নান্দেজ- সালাসের মানব পাচার চক্র বেশ পুরনো। ২০০৮ সালেই ফেডারেল এজেন্টরা তাঁকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে গ্রেফতার করেছিল। ১৮ মাস কারাদণ্ড ভোগ শেষে ২০১২ সালে তিনি মুক্তি পান। এরপর তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়। এর পরও তিনি মানব পাচার বন্ধ করেননি। বরং আরও বড় পরিসরে চক্র বানিয়ে মানব পাচার শুরু করেন। মেক্সিকোর সবচেয়ে প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী সিনালোয়া কার্টেলের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেক্সিকোর সীমান্তলাগোয়া মেক্সিকালি শহর থেকে মানব পাচারকারী চক্র পরিচালনা করে আসছেন হার্নান্দেজ-সালাস। বিভিন্ন সময় মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ঢুকে ধরা পড়া বাংলাদেশিরা বলেছেন, বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে তাঁদের মেক্সিকোর মেক্সিকালি শহরের একটি হোটেলে রাখা হতো। এরপর তাঁদের পাঠানো হতো যুক্তরাষ্ট্রে। হার্নান্দেজ-সালাসের অন্যতম ডাকনাম ‘লা লুপে’। গত ১৬ মার্চ মেক্সিকালির জাকাটেকাস এলাকার একটি বাড়ি থেকে লা লুপে ও তাঁর মূল সহযোগী সসেডো-হুইপিওর অবস্থান শনাক্ত হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অ্যারিজোনা ডিস্ট্রিক্টে ২০২১ সালে এক মামলায় লা লুপে ওরফে হার্নান্দেজ-সালাস ও সসেডো-হুইপিওর বিরুদ্ধে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার অভিযোগ করেছে, ওই চক্র বাংলাদেশ, ইয়েমেন, পাকিস্তান, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, রাশিয়া, ব্রাজিল, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করার পথ দেখিয়েছে। এর বাইরে ২০১৯ সাল থেকে অভিবাসীদের মেক্সিকালি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য তাঁরা লাখ লাখ ডলার নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অর্থ পেতেন হার্নান্দেজ-সালাস সসেডো- হুইপিও। সেখান থেকে আসা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তাঁরা মেক্সিকালি বাসস্টেশনে গ্রহণ করতেন। এরপর তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর আগ পর্যন্ত ‘সেফ হাউসে’ রাখা হতো। বিগত বছরগুলোতে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করা বাংলাদেশিরা গ্রেফতার হওয়ার পর মেক্সিকালি শহরে ‘সেফ হাউসে’ থাকার কথা বলেছিলেন।

সর্বশেষ খবর