শিরোনাম
বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

১৮ বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

হত্যাকান্ডের ১৮ বছর পর জানা গেল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সন্তানকে হত্যা করে দুই স্ত্রীকে নিয়ে নাটক সাজিয়েছিলেন। হত্যাকান্ডের ১৫ বছর পর বাদী আকসেদ আলী সিকদার মারা গেলেও তার দুই স্ত্রীর দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে আসে। ১৩ বছর বয়সী মেয়ে রেবেকা খাতুনকে হত্যা করেছিলেন বাবা আকসেদ আলী সিকদার। গতকাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রাজশাহী অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এমন তথ্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ১০ জুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লক্ষ্মীনগরে রেবেকা খাতুন খুন হয়। ওই সময় বাদী আকসেদ আলী সিকদার পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ঘটনার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে তিনি দুই স্ত্রী ভায়েলা খাতুন ও আফিয়া বেওয়ার সঙ্গে গল্প করছিলেন। একপর্যায়ে জানতে পারেন আনুমানিক ৫০ জন লোক তার বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। এ সময় স্ত্রীর পরামর্শে আকসেদ আলী বাড়ির অদূরে একটা মাঠিয়ালে লুকিয়ে পড়েন। দুষ্কৃতকারীরা বাড়ি থেকে চলে গেলে কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখেন তার স্ত্রীর হাত রক্তাক্ত। আর ছুরির আঘাতে রেবেকা খাতুনের পেট থেকে নাড়ি-ভূড়ি বের হয়ে গেছে। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে রেবেকার মাথায় পানি দিতে থাকলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এ মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করাহয়। মামলাটি প্রথমে বাঘা থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্তের জন্য নেয়। তারা তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর ২০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। আদালতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলে ১৮ বছর। পরে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী আদালতের বিচারক মনে করেছেন, মামলটি আরও তদন্ত হওয়া দরকার। তাই ২০২২ সালের ১৬ মে রাজশাহী পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তে নেমে পিবিআইয়ের কাছে প্রশ্ন ওঠে গ্রাম্য এলাকায় রাত সাড়ে ১১টা গভীর রাত। এ সময় ৫০ জন লোক এসে একটা ১৩ বছরের মেয়েকে মেরে চলে গেল। আর বাড়ির টিনে মাত্র দুটি কোপের চিহ্ন ছিল। এটা কতটা বাস্তব। এই প্রশ্ন সামনে রেখে মামলাটির তদন্ত শুরু করে পিবিআইর উপ-পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম। একপর্যায়ে বাদী আকসেদ আলী সিকদারের স্ত্রী ভায়েলা খাতুন ও রেবেকা খাতুনের মা আফিয়া বেওয়া আদালতে স্বীকার করেন আসামিদের ফাঁসানোর জন্য তাদের স্বামী আকসেদ আলী রেবেকাকে হত্যা করেছে। খুনের সময় বাধা দিতে গেলে তার দুই স্ত্রীর হাতের বিভিন্ন জায়গায় কোপ দেয়। মেরে ফেলার মূল কারণ ছিল প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো। তাদের নিজেদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের মামলা চলছে। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ বলেন, তারা আদালতের কাছে স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছেন আকসেদ আলী তার মেয়েকে হত্যা করেছেন। যদিও আসামি আকসেদ আলী মারা গেছেন। আসামির দুই স্ত্রী এখন এই মামলার সাক্ষী।

সর্বশেষ খবর