শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাঁচ সিটিতে নৌকা চান ৪১ জন

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কে হবেন নৌকার মাঝি তা চূড়ান্ত হবে আগামীকাল। বেলা ১১টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচ সিটিতে নৌকা পেতে চান দলের ৪১ নেতা। গড়ে একটি মেয়র পদের বিপরীতে আটজন দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী। সর্বোচ্চ সংখ্যক মনোনয়ন প্রার্থী হয়েছেন গাজীপুর সিটিতে। এখানে নৌকাপ্রত্যাশী ১৭ জন। আর সবচেয়ে কম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন শিক্ষানগরী রাজশাহীতে। এখানে নৌকা চান তিনজন। এরপর আছে খুলনায় চারজন, বরিশালে সাতজন এবং সিলেটে ১০ জন। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ২৫ হাজার টাকা। ৯ এপ্রিল থেকে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে চার দিনব্যাপী ফরম বিতরণ করা হয়। বুধবার বিকালে শেষ হয় মনোয়নপত্র জমা ও বিতরণের কাজ। জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রগুলো বুধবারই দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ওপর নির্ভর করছে নৌকা প্রার্থীর জয়-পরাজয়। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় কোনো নেতা নৌকা না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে নৌকার পরাজয়ের আশঙ্কাও করছেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। আবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নির্বাচনী মাঠে না থাকায় দু-এক সিটিতে নিজ দলের প্রতিপক্ষ নিজ দল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও যোগ্য ব্যক্তিকেই নৌকা দেওয়া হবে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে কারণে এমন কোনো প্রার্থী দেবে না যাতে নৌকার পরাজয় হয়। মাঠের জরিপ ও তথ্য নিয়েই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেয়র পদে দায়িত্ব পালনে সক্ষম, এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন, এমন ব্যক্তির হাতেই নৌকা তুলে দেওয়া হবে। দলীয় সভানেত্রী এবং মনোনয়ন বোর্ড এগুলো চূড়ান্ত বিশ্লেষণ করেই মনোনয়ন দিয়ে থাকেন।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজমত উল্লা খান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মেসবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আহম্মেদ, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আবদুল আলীম মোল্লা, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবেক সদস্য আশরাফুজ্জামান সেলিম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রিয়াজ মাহমুদ আয়নাল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক উপদফতর সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এস এম আশরাফুল আলম, গাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হারুন-অর-রশীদ ও যুবলীগের সাবেক সদস্য মো. রুহুল আমিন ম-ল। সিলেট সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন সংগ্রহকারী ১০ নেতা হলেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল, সিলেট মহানগর অন্তর্গত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাহিউদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালিক, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ সেলিম। রাজশাহী সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন সংগ্রহকারী তিন নেতা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মাহফুজুল আলম এবং রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। খুলনা সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন সংগ্রহকারী চার নেতা হলেন- খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য রেণু রেমা, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম এবং খুলনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম। বরিশাল সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন আবেদন ফরম সংগ্রহকারী সাত নেতা হলেন- বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, যুবলীগ সদস্য ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়ারাত সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল বি এম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মঈন তুষার, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন আহমেদ। দলীয় সূত্র মতে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে শোনা যাচ্ছে নানা মত। কেউ বলছেন, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাধারণ ক্ষমা করে আওয়ামী লীগ দলে ভিড়িয়েছে। সুতরাং তিনি এবারও পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। আবার কেউ বলছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রবীণ নেতা আজমত উল্লা খানকে দল মনোনয়ন দেবে। এ দুই প্রার্থীর সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়ে কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনে চমক থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। নতুন প্রার্থীর ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলের নামই বারবার আসছে। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও সাদিক আবদুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন চেয়ে সাদিক আবদুল্লাহকে প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। চাচা না ভাতিজা কে হবেন দলীয় মেয়র প্রার্থী তা চূড়ান্ত হবে আগামীকাল।

 

সর্বশেষ খবর