মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

গরমে বাড়তি দুর্ভোগ লোডশেডিং

♦ চেষ্টা ১৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের ♦ ঢাকার বাইরে কয়েক ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ ♦ তাপমাত্রা কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে

জিন্নাতুন নূর

গরমে বাড়তি দুর্ভোগ লোডশেডিং

তীব্র গরমে পুড়ছে গোটা দেশ। আর এর মধ্যেই দেশজুড়ে বেড়েছে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি। অথচ ১৩ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ও ফ্যানের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের ব্যবহারও বেড়েছে। একই সঙ্গে রমজান ও সেচ মৌসুম থাকার কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে বেশি। ঢাকার কিছু এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য লোডশেডিং হলেও ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর ও গ্রামে সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। এ অবস্থায় সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ১৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের চেষ্টা করছে। তারা বলছে, তাপমাত্রা কমে এলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে। ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় এখন দিনে-রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। আর রমজানে লোডশেডিংয়ের জন্য সাহরি করতে গিয়ে রোজাদাররা যেমন বিপাকে পড়ছেন, একইভাবে তীব্র গরমে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় মানুষের রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রমও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাপমাত্রা না কমলে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিও কমবে না। গত বছর জ্বালানি সংকটের কারণে সরকার বেশ কয়েক মাস ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং করে। পরে এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে আবারও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি শুরু হলে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। এর সঙ্গে দেশে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও উৎপাদনে আসে। ফলে এ সময় বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের পার্থক্য ছিল কাছাকাছি। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের কারণে লোডশেডিং বৃদ্ধি পায়। ১৩ এপ্রিল রাত ৯টায় দেশে রেকর্ড ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও সে সময় ৩০৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। এদিন সর্বোচ্চ ৭৭৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। আর পরদিন ১৪ এপ্রিল লোডশেডিং ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৮০ মেগাওয়াট। দু-তিন দিন ধরে দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াটে ওঠানামা করছে। আর বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছুটা বেশি। ফলে গড়ে ৭০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা সক্ষমতা থাকার পরও চাহিদা অনুসারে উৎপাদিত না হওয়ার জন্য জ্বালানি সংকট, কেন্দ্র মেরামত ও কেন্দ্র সংরক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, গতকাল দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ১৫ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট আর চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ৮৪০ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ পরিদফতর) মো. শামীম হাসান বলেন, হঠাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ও ফ্যানের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি পড়লে বা তাপমাত্রা কমে গেলে বিদ্যুতের বাড়তি এ চাপও কমে আসবে। তিনি জানান, বিদ্যুতের উৎপাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াটে নেওয়ার জন্য পিডিবি চেষ্টা করছে। তাপপ্রবাহের কারণে কয়েক দিন ধরে দেশে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। দিনে-রাতে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগ ও গ্রামাঞ্চলে সাত-আট ঘণ্টা করেও লোডশেডিং হচ্ছে। তবে রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং পরিস্থিতি কিছুটা কম। আর ঢাকায় এলাকাভেদে দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের খুলনা প্রতিনিধি জানান, অস্বস্তিকর গরমের মধ্যে খুলনায় চলছে দফায় দফায় লোডশেডিং। দিনে-রাতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থাকছে বিদ্যুৎবিহীন। লোডশেডিংয়ে অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনের কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১-এর সহকারী প্রকৌশলী তারেক আহমেদ জানান, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। আবার রামপাল কেন্দ্র থেকে চাহিদামতো সরবরাহ না থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুরেও চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। রংপুর বিভাগের আট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৮৫০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট। গতকাল দুপুরে ঘটতি ছিল ১৫০ মেগাওয়াটের বেশি। ফলে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখ লাখ গ্রাহক। প্রচ- গরমে সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে শিশু ও বয়স্করা। নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই (নেসকো) বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। তবে সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়া ও গাজীপুরে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। নরসিংদীতে দিনে-রাতে ১০ থেকে ১২ বার লোডশেডিং হচ্ছে। জামালপুরে দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। সাতক্ষীরায় রাতে বিদ্যুৎ প্রায় থাকেই না। ফরিদপুরে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। চট্টগ্রামেও লোডশেডিং পরিস্থিতি ভয়াবহ। একই অবস্থা শেরপুরেও। মাগুরায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে রাজশাহীতেও।

সর্বশেষ খবর