সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
সরগরম সিটি নির্বাচনের মাঠ

পরিবর্তনের স্লোগান প্রার্থীদের মুখে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দুই মেয়াদে মেয়রের চেয়ারে আছেন আরিফুল হক চৌধুরী। আগামী নির্বাচনেও তিনি ছিলেন শক্তিশালী হেভিওয়েট প্রার্থী। কিন্তু তাঁর হ্যাটট্রিক বিজয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত। বর্তমান সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় আরিফ পড়েছেন বিপাকে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করেননি নিজের অবস্থান।

প্রার্থিতা ঘোষণা না দিলেও আরিফের ছায়ার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন বাকি প্রার্থীরা। আরিফের ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা।

২০০৩ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। ওই সময় কাউন্সিলর হয়ে তিনি প্রভাব খাটাতেন মেয়রের চেয়েও বেশি। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে নগর ভবনে প্রভাব খাটাতেন। মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান তাঁর কাছে ছিলেন অনেকটা অসহায়। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে ‘ভোটের রাজা’ খ্যাত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে                পরাজিত করে মেয়র হয়ে চমক দেখান আরিফ। এরপর ২০১৮ সালেও আরিফের কাছে ধরাশায়ী হন কামরান। টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে আরিফ সিলেট নগরীর উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। যানজট নিরসনে রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল উদ্ধার, খনন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে মেয়র নির্বাচিত হলেও উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পেতে কখনো বেগ পেতে হয়নি আরিফকে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন আরিফকে। আরিফের উন্নয়ন কাজের প্রশংসা খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করেছেন। উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে নগরবাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারায় আগামী সিটি নির্বাচনেও আরিফ নিজেকে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে ধরে রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে আরিফ শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে দূরে থাকবেন না অংশ নেবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ২০ মে রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করে তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা।

এদিকে আরিফ প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানালেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মেয়র প্রার্থীরা আরিফকে টার্গেট করেই তাঁদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরিফের নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকারের দেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট করার অভিযোগ তুলছেন তাঁর বিরুদ্ধে। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য এবার ‘পরিবর্তনের’ স্লোগান নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আরিফ পরিকল্পিত উন্নয়ন না করে জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছেন। অনিয়ম ও লুটপাট করেছেন। তাই মানুষ এবার পরিবর্তন চাচ্ছে। তারা উন্নয়নের জন্য এবার নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে চায়।’ জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এখন জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে। আগে যেসব এলাকায় বর্ষায় পানি উঠত না, এখন অল্প বৃষ্টিতে নগরীর ওইসব এলাকায় হাঁটুজল জমে। এতেই বোঝা যায় আরিফুল হক চৌধুরী উন্নয়নের নামে কী পরিমাণ লুটপাট করেছেন। মানুষ এ অবস্থায় পরিবর্তন চাচ্ছে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘নগরবাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের মেয়র দেখেছে। কেউই সিলেটবাসীকে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন দিতে পারেননি। এবার মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর