শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

১৯ কর্মকর্তাকে মিলে আটকে রেখেছেন কর্মচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালের সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টানা ২৭ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার দুই শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধ করে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মিলের দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষে আটকে রেখেছে তারা। খাবার-পানিসহ সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় চার্জ ফুরিয়ে মুঠোফোনও বন্ধ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। টেক্সটাইলের মূল ফটকে কর্তৃপক্ষের মুঠোফোনে কল করা হলে গেট কিপার পরিচয়ে একজন বলেন, ভিতরের সব মোবাইল ফোন বন্ধ। চার্জ নেই। খাবার-পানি সবকিছু বন্ধ। কেউ ভিতরে ঢুকতে পারে না, বাইরেও যেতে পারে না। সমস্যা সমাধানে কেউ উদ্যোগ নেয়নি বলে তিনি জানান। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই শ্রমিককে বকেয়া দিয়ে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি মেনেও নিয়েছেন। প্রায় ১ কোটি টাকার বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গতকাল বিল জমা দিতে মিলের কর্মকর্তারা বাইরে যেতে চাইলেও তাদের বের হতে দেওয়া হয়নি। কর্মকর্তাদের উদ্ধারে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি। জানা গেছে, জিম্মি ১৯ জনের অন্যতম ওই টেক্সটাইলের ডিজিএম (প্রোডাকশন) আবুল কালাম আজাদ গতকাল দুপুর আড়াইটায় মুঠোফোনে জানান, গত মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ ফোরম্যান বেল্লাল গাজী এবং ফিডার হেড নুরুল হক নুরুর সব বকেয়া পরিশোধ করে তাদের অব্যাহতি দেয়। এ ঘটনার জেরে বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কিছু শ্রমিক মিলের জিএম শামীম সরকার, কমার্শিয়াল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, কিউসি ম্যানেজার আবুল হোসেন এবং তাকেসহ ১৯ জনকে ফ্যাক্টরির দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষে আটকে বাইরে তালাবদ্ধ করে দেয়। গতকাল দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অভুক্ত ছিলেন প্রত্যেকে। পরে ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশের দেওয়া বনরুটি এবং পানি খেয়ে ওই কক্ষে আছেন তারা। অন্য শ্রমিকরা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন ফ্যাক্টরি চত্বরে। আবুল কালাম আজাদের বোন জেবুন্নেছা মুঠোফোনে জানান, তার ভাই উচ্চ রক্তচাপের রোগী। গতকাল দুপুরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওষুধ পৌঁছানো হয়। ১৯ জন মানুষ ২৭ ঘণ্টা ধরে জিম্মি থাকার পরও সমস্যা সমাধানে মিল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয় বলে তিনি জানান। টেক্সটাইল মিলের প্রস্তাবিত শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত বেল্লাল গাজী বলেন, ৩২ বছর মিলে চাকরি করেছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের বকেয়া পরিশোধ করলেও অযৌক্তিকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে। তারা মিল থেকে বের হয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় শ্রমিক কর্মচারীরা নিজেদের সব বকেয়ার দাবিতে মিলের কর্মকর্তাদের দোতলায় আটকে রেখেছে। এমনকি তাদেরও (অব্যাহতিপ্রাপ্ত দুজন) কম্পাউন্ড থেকে বের হতে দিচ্ছে না। এদিকে জিএম শামীম সরকারের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

 

সর্বশেষ খবর