শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝুঁকির অর্থনীতিতে সরকারের সংস্কার

সতর্ক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হবে, ঋণে নজরদারি বাড়বে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ঝুঁকির অর্থনীতিতে সরকারের সংস্কার

করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের অর্থনীতিতে নানা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় আর্থিক খাতের সংস্কারে কিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এসব উদ্যোগের মধ্যে থাকছে সরকারি খরচ কমানোর পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিকে গতিশীল করার পদক্ষেপ। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মধ্যমেয়াদে সতর্ক রাজস্বনীতি অনুসরণ করবে সরকার; সরকারি ও রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি ঋণের নজরদারি বাড়ানো হবে; বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে শৃঙ্খলা আনতে ডলারের একক বিনিময় হার কার্যকর করা হবে; শিল্প খাতের উৎপাদনে গতি বাড়াতে পর্যায়ক্রমে আমদানির ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে; দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা খাত সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলমান থাকবে এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বাড়ানো হবে সরকারি বিনিয়োগ।

চলমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতি কোন পথে চলবে, সে বিষয়ে একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার সঙ্গে এ নীতি বিবৃতিটি সরবরাহ করে অর্থ বিভাগ। ওই নীতি বিবৃতিতে মধ্যমেয়াদে এসব নীতি সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়াসহ অর্থনীতিতে এখন নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সরকার যে নীতি গ্রহণের কথা বলেছে, সেগুলো আলাদা আলাদা বাস্তবায়ন করলে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। সংকট মোকাবিলায় একটি সমন্বিত রূপরেখা প্রণয়ন করে একযোগে এসব নীতি বাস্তবায়ন করলে অর্থনীতিতে এর সুফল মিলতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ। 

মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতির তথ্য অনুযায়ী এসব সংস্কার কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো : রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, সরকারি ঋণের খরচ কমানো, ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণ এবং সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়ন। আর সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো : বহিঃ খাতে লেনদেনের ভারসাম্য শক্তিশালী করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যেসব সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে তুলে নেওয়া। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মধ্যমেয়াদে সতর্ক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হলেও পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিনে যে শর্ত আরোপ হয়েছে শিল্প উৎপাদনের স্বার্থে তা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হবে। উন্নয়ন কার্যক্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি ভর্তুকি এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের ব্যয় যৌক্তিকীকরণে উদ্যোগ নেবে সরকার। এক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ এবং সরকার ও সরকার কর্তৃক গ্যারান্টিকৃত মোট ঋণের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার বৈদেশিক ঋণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেয়। ব্যাংক বহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণগ্রহণ একটি বড় উৎস্য। এর ফলে সরকারকে অন্য খাতের তুলনায় বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে সরকার সঞ্চয়পত্র ঋণ কার্যক্রমে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর আওতায় বাজেট ঘাটতি ও সরকারি ঋণের মাত্রা সীমিত রাখার মাধ্যমে সরকারি ব্যয়ের গুণগতমান নিশ্চত করা যাবে। তবে সরকারি ব্যয় কমাতে গিয়ে তা যেন কোনোভাবেই স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাে  নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সে দিকেও বিশেষ দৃষ্টি থাকবে। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা এবং সরকারি বিনিয়োগে ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।  অভ্যন্তরীণ ঝুঁকির পাশাপশি বহিঃ খাতের ঝুঁকি মোকাবিলায়ও কিছু সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে সরকার। বহিঃ খাতের লেনেদেনের ভারসাম্য শক্তিশালী করতে ডলারের একাধিক মুদ্রাবিনিময় হারের পরিবর্তে একক বিনিময় হার প্রচলন করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে শৃঙ্খলা আনতে মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।

সর্বশেষ খবর