অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন কওমি মতাদর্শী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেড় শতাধিক নেতা। এরা হলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশসহ কওমি মতাদর্শী সাতটি দলের নেতা। এমনকি আদর্শ প্রশ্নে চরম বিরোধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন এমন তিনজনও ঠাঁই পেয়েছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। হেফাজতের একটি অংশের অভিযোগ : আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আসন নিয়ে দর কষাকষি করতে তড়িঘড়ি ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আজহারীর দাবি- ‘হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতের বিভিন্ন পদে যে সব ইসলামী দলের নেতা রয়েছেন তারা কখনো সংগঠনের মিটিং সমাবেশে রাজনৈতিক দলের চর্চা কিংবা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসলামী দলের অনেক নেতাই সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এটা তাদের দলীয় ও ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে হেফাজতের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। হেফাজতের কোনো নেতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তাকে সমর্থন দেওয়া হবে না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের এক নেতা বলেন, রাজনীতির মাঠে হেফাজতে ইসলাম বড় ফ্যাক্টর। সারা দেশেই কওমি মতাদর্শীদের ভালোই ভোট ব্যাংক রয়েছে। এটাকে কাজে লাগিয়ে বড় দলগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনী সুবিধা নিতেই তড়িঘড়ি কেন্দ্রীয় কমিটি করা হয়েছে। বিশাল এ কমিটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেড় শতাধিক নেতা রয়েছেন। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকাও তৈরি করা হয়েছে যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন জোটের ব্যানারে নির্বাচন করতে আগ্রহী। হেফাজতে ইসলামের পদ-পদবিকে কাজে লাগিয়ে তারা সংসদ নির্বাচনে বড় দলগুলোর সঙ্গে দেনদরবার করবে। জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট হঠাৎ করেই ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদরাসায় ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি এবং ২০২ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে দেড় শতাধিক পদে এসেছেন সাত ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতা। এর মধ্যে রয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারা। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে এমন তিন নেতাও হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা। এর মধ্যে ৫৩ উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ‘সদর’ আল্লামা জিয়াউদ্দিন, খেলাফত মজলিসের সাবেক সভাপতি আল্লামা মুহাম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী, খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা আবদুল বাসেত আজাদসহ কমপক্ষে ১৫ উপদেষ্টা সরাসরি বিভিন্ন ইসলামিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ২০২ সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী খেলাফত আন্দোলনের আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের খেলাফত মজলিসের মহাসচিব, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজি বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির, মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচির দায়িত্ব পালন করছেন। ৪৫ নায়েবে আমিরের মধ্যে ২৫ জন সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহাসচিব এক সময় ইসলামী ঐক্য জোটের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পৃক্ত ছিলেন। সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১১ যুগ্ম-মহাসচিবের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, নেজামে ইসলামী পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ। খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা মীর ইদরিস। কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব, সম্পাদকীয় পদ, সহকারী সম্পাদক এবং সদস্য পদে আসা ১৪১ নেতার মধ্যে প্রায় ১০০ জনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত।