শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

চার জেলায় নদী দখলের উৎসব

দখলদার ৪ হাজারের বেশি, তালিকায় রাজশাহীর ৬০০, নওগাঁর ২৯২৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৬১ ও নাটোরের ৪৪৫ জন ও প্রতিষ্ঠান

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

চার জেলায় নদী দখলের উৎসব

নদীর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উত্তরের চার জেলায় নদীর জমি দখল করে রেখেছেন ৪ হাজার ২৩১ ব্যক্তি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এদের তালিকা করেছে। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারেনি। দখলদারের তালিকায় আছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা নেতা-কর্মী। দখলদারের তালিকায় নাম আছে সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেরও।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) তালিকা অনুযায়ী, রাজশাহীতে ৬০০, নওগাঁয় ২ হাজার ৯২৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৬১ ও নাটোরে ৪৪৫ জন দখল করে আছেন নদীর জমি। পদ্মা, মহানন্দা, আত্রাই, বারনই নদী ও নারোদ নদ দখল করে নানা স্থাপনা গড়ে তুলেছেন তারা।

রাজশাহীর বড়কুঠির সামনে পদ্মায় একসময় পানি ছিল। তখন নৌকাও চলত। কিন্তু এখন পানি নেই। নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ফুডকোট। রাজশাহীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চের স্থানে কয়েক বছর আগেও ছিল পদ্মার জলধারা। কয়েক বছর আগে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে সেখানে চর জেগেছে। বর্ষায় কিছুদিন পানি উঠলেও সারা বছর থাকে শুকনো। নদী আরও দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেগে ওঠা চরগুলো দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, স্থায়ী পাকা স্থাপনা।

নগরীর বড়কুঠি, শহীদ মিনার, তালাইমারী ফুলতলা ঘাটেও স্থাপনা করেছে সিটি করপোরেশন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘রাজশাহীতে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। বিনোদন কেন্দ্র বলতে শুধু পদ্মা নদী। মানুষের বসার জন্য কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ নওগাঁর মান্দায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জায়গা দখল করেছেন পাউবোর কর্মকর্তা। নিজে ও স্বজনদের নিয়ে স্থাপনা বানিয়ে দিয়েছেন ভাড়া। বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে চিঠি দেওয়া হলেও কর্ণপাত করেননি এ কর্মকর্তা। রাজশাহীর বারনই ও নওগাঁর আত্রাই নদীর জায়গা দখল করেছেন পাউবোর এক রাজস্ব কর্মকর্তা। স্বজনদের নিয়ে তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর নির্মাণ করেছেন স্থাপনা। সে স্থাপনা ভাড়াও দিয়েছেন। নাটোরের মাধবপুরে রেগুলেটরের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে টিনের চালাঘর। কোথাও কোথও নির্মাণ করা হয়েছে আধাপাকা ঘর। বড়হরিশপুরে নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে দোতলা বাড়ি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোহালবাড়ী, সদর, হরিরামপুর ও পাগলার দাঁড়া খালের ওপর রেগুলেটর ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে আধাপাকা বাড়ি। কোথাও কোথাও পাকা বাড়ি। তালিকা করে স্থাপনা সরিয়ে নিতে চিঠি দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘নদী দখল করে যারা স্থাপনা করেছেন, তা উচ্ছেদের জন্য তালিকা করা হয়েছে। বাজেট ছিল না। এখন বাজেটের ব্যবস্থা হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর