সরকার পতনের পর খোঁজ মিলছে না প্রভাবশালী অনেক মন্ত্রী এমপির। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও কোনো খোঁজ মিলছে না। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর থেকে উধাও হয়ে যান এসব নেতা। এর আগে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এসব মন্ত্রী প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় সরব উপস্থিতি জাতির সামনে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে পুরো আন্দোলনকে থামাতে বক্তব্য দিয়েছেন। সচিবালয়, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ে শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ভিড় সরকার পতনের পরপরই এরা কোথায় চলে গেছেন কেউ জানে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিমানবন্দরে পালাতে গিয়ে আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও বাকিদের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ কেউ দিতে পারছে না। ধারণা করা হচ্ছে সোমবার পর্যন্ত শতাধিক মন্ত্রী, এমপি ও নেতা দেশ ছেড়েছেন। তারা রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও দুবাই পাড়ি জমান। রবিবার রাতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিজ এলাকা গাজীপুরেই অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আলোচিত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসভবন সোমবার ভাঙচুর হলেও তিনি ঠিক কোথায় ছিলেন তা জানা যায়নি। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বেশি সরব ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে পারছে না। জানা গেছে সরকার পদত্যাগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এলে আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা আত্মগোপনে চলে যান। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন। বাদ যায়নি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনও, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছিল। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের অনেকেই দলের নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা তাদের খোঁজ পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপিদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সহিংসতার মধ্যে অনেক মন্ত্রী-এমপি দেশ ছেড়েছেন। গত ১৪ জুলাই দেশের পরিস্থিতি নাজুক দেখে বিদেশ থেকে ফ্লাইটের টিকিট কেটে ঢাকা ছাড়েন অনেক প্রভাবশালী।