বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান হিসেবে গত ২০১৯ সালের মে’তে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ কয়েকজনকে ডিঙ্গিয়ে সেসময় নিয়োগ পান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য। ড. কাজী শহীদুল্লাহ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর ছোট ভাই। জানা গেছে, বড় ভাইয়ের খুঁটির জোরেই তিনি বাগিয়ে নেন ইউজিসি চেয়ারম্যানের পদ। চার বছরের মেয়াদ শেষ না হতেই এ অধ্যাপক আক্রান্ত হন পাকস্থলীর ক্যান্সারে। অস্ট্রেলিয়ায় নেন উন্নত চিকিৎসাও। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও প্রথম মেয়াদ শেষ হতেই ফের তদবির করে বাগিয়ে নেন দ্বিতীয় দফায় ইউজিসি চেয়ারম্যানের পদ। আর যোগদানের আড়াই মাস পরই ৭৬ দিনের ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য ফের অস্ট্রেলিয়া যান তিনি। এই ছুটি শেষ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ছুটি ছাড়াই প্রায় এক বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দপ্তরের বাইরে থাকলেও তিনি অনৈতিকভাবে নিয়মিত গ্রহণ করছেন সচিব পদমর্যাদার বেতন-ভাতা। দীর্ঘ সময় উচ্চশিক্ষার তদারক এ সংস্থার চেয়ারম্যান না থাকায় উচ্চশিক্ষায় নৈরাজ্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলেও পদ আঁকড়ে থাকায় ইউজিসির সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। বর্তমানে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব চালিয়ে নিচ্ছেন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ২৫ মে দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ড. কাজী শহীদুল্লাহ। এবারও আওয়ামী লীগ নেতা ভাইয়ের জোরে তদবির করে চেয়ারম্যান হন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের পর গত বছরের ২০ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৭৬ দিনের ছুটি নিয়ে ফের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়া যান। এ ছুটির শেষ হওয়ার পরও সুস্থ না হওয়ায় ফের চিকিৎসার জন্য ছুটির আবেদন পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কোন ভিত্তিতে, কীভাবে ছুটি দেওয়া হবে তা জানতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসি থেকে এর জবাব দিয়ে পুনরায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠালেও কোনো ছুটি মঞ্জুর করেনি মন্ত্রণালয়। সরকার কোনো ছুটি মঞ্জুর না করলেও ইউজিসি চেয়ারম্যান থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। চিকিৎসা শেষে গত এপ্রিলে দেশে ফেরেন তিনি। এর পর গত ২ মে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে ঢাকা ক্লাবে ডিনার পার্টির আয়োজন করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ। ক্লাবে পার্টি দিলেও দেশে ফিরে কর্মস্থল ইউজিসিতে যোগদান করেননি তিনি। ড. কাজী শহীদুল্লাহ সরকারের কাছে ছুটি নেওয়া ছাড়াই মে’তেই ফের ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন। জানা গেছে, সরকারের কাছে ছুটি নেওয়া ছাড়াই গত নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত নয় মাস ধরে কর্মস্থলে অবস্থান করলেও সচিব পদমর্যাদায় নিয়মিত বেতন-ভাতা গ্রহণ করছেন তিনি। দুজন কর্মচারীর বেতনও দেওয়া হচ্ছে ইউজিসির পক্ষ থেকে। আর এ সময়ে চেয়ারম্যান দপ্তরের নামে প্রতি মাসে তোলা হয়েছে আপ্যায়ন ভাতাও।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বজনপ্রীতি বা অন্য কোনো খুঁটির জোরে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ বাগিয়ে নেওয়ার একটা বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে এখানে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার। আর যে ইউজিসি সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় তদারকি করবে সেটির চেয়ারম্যান এভাবে নিয়োগ পেলে আর ছুটি ছাড়া কর্মস্থলের বাইরে থাকলে সেটি তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে বাইরে থেকে বেতন-ভাতা নেওয়া তো অনৈতিক। এ সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, যে ইউজিসি সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অনিয়মের তদন্ত করে ‘নীতি শিখিয়ে থাকে’ সেই কমিশনের চেয়ারম্যান যদি অনৈতিকভাবে কর্মস্থলের বাইরে থেকে আর্থিক সুবিধা নেন তা খুব দুঃখজনক।
ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ সময় চেয়ারম্যান দপ্তর অব্যবহৃত থাকায় দপ্তরের মিটিং রুমের টেবিল, ওয়াল ইন্টেরিয়রেও ঘুণে ধরেছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেশের বাইরে থাকায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।