সাংবাদিকদের সঙ্গে আজ সৌজন্য বিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ‘সৌজন্য বিনিময়’ অনুষ্ঠানে নিজেদের সরে যাওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার কমিশনার পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা চিন্তায় রেখেছেন পদত্যাগের বিষয়টি। এ জন্য তারা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। নিজেদের ফাইলপত্র প্রস্তুত করেছেন। তবে তারা নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন, নাকি এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য কোনো চিন্তা আছে- তা জানতে চেষ্টা করছিলেন। এরই মধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আওয়ামী লীগ আমলের আইন অঙ্গনের অনেকে পদত্যাগ করেছেন। পুলিশ, প্রশাসনসহ সবখানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সবশেষ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও পদত্যাগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের পদত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশন সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১২টায় ‘নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়’ করার কথা রয়েছে। বর্তমান কমিশনের বাকি চার সদস্য হলেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। গতকাল নির্বাচন ভবনে সিইসি অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বিকালে নির্বাচন ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ‘পদত্যাগের’ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাংবাদিকদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (আজ) জানাব। দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে সবকিছু জানানো হবে।’ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কবে দেখা করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাব।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর এ এক মাসে কোনো একদিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছিল বর্তমান কমিশন। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার কথা বলা আছে। কিন্তু বর্তমানে তা সম্ভব নয়; তবে সংবিধান স্থগিত করা হয়নি বা সরকার পতনের পরে কোনো ফরমানও জারি করা হয়নি। তবে ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়ে গেছে। সেই দায়িত্ব বর্তায় বর্তমান কমিশনের ওপরই। এই কমিশন যদি আরও এক-দুই মাস দায়িত্বে থাকে, তাহলে এ বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে। কারণ, নির্বাচন আয়োজন করার সাংবিধানিক দায়িত্ব ইসির। আইনি ফাঁকফোকর রেখে যদি নির্বাচন পেছানো হয়, তাহলে কোনো একসময় ইসিকে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশনাররা নিজে থেকেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিরাজমান পরিস্থিতিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ‘বিপ্লব ও ফরমান : সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামে কলাম লেখেন। ওই কলাম লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, আলোচনার জন্য কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। তাই নির্বাচন কমিশন যে ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়েছে, সেটা পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন মনে করছেন। এখন বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ‘বিপ্লবের’ পর নির্বাচন কমিশন কীভাবে সংকটে পড়েছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন হয়তো অচিরেই বিগত হবে। কিন্তু এতে করে সংকটের নিরসন হবে না। সংসদ অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে ভেঙে দিতে হয়েছে।’
আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় : ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম গতকাল এক বার্তায় জানান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষ (কক্ষ নং ৫২০) নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসির একান্ত সচিব মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে এ সৌজন্য বিনিময়ে পুরো কমিশন উপস্থিত থাকবে। স্যার, সব বিষয় তুলে ধরবেন।
নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ : প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগসহ নির্বাচন কমিশন সংস্কারের দাবিতে ইসি সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ‘নাগরিক সমাজ’। গতকাল বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে তারা এই বিক্ষোভ করে ‘১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে বিভিন্ন স্লোগান দেয় একদল লোক। তবে মূল গেট বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ভিতরে ঢুকতে পারেনি বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের পাশাপাশি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম নূরুল হুদা ও রকিব উদ্দিন আহমেদের বিচার চাওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর আড়াই বছরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের প্রায় ২ হাজার ভোট করেছে বর্তমান কমিশন। বিক্ষোভ সমাবেশে ইসি সংস্কার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মোট পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আউয়াল কমিশনের পদত্যাগ, ২০১৮ সালের কে এম নূরুল হুদা কমিশনের বিচার, ২০১৪ সালের কাজী রকিব কমিশনের বিচার, বিগত সরকারের ‘দালাল’ কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং দক্ষ, যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের পদায়ন। বিক্ষোভকারীরা ইসি সংস্কারের দাবি সংবলিত ব্যানার নির্বাচন ভবনের গেটের পাশে টাঙিয়ে দেন।