বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্বস্তি নেই বস্তির জীবনে

রাশেদ হোসাইন

স্বস্তি নেই বস্তির জীবনে

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাজের খোঁজে ঢাকা শহরে প্রতিদিনই মানুষ আসছে। ঢাকায় এসে তারা নানা ধরনের অস্থায়ী কাজ করছে। জীবিকার তাগিদে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা এসব নিম্নআয়ের মানুষ থাকার জায়গা হিসেবে ঠাঁই করে নেয় ঢাকার বস্তিতে। স্বল্প খরচে জীবন চালানোর জন্য এসব বস্তিই তাদের শেষ ভরসা। অথচ ঢাকার অন্যান্য এলাকার তুলনায় বস্তিতে জীবনযাত্রার খরচ কম নয়। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে আবাসন সব কিছুরই খরচ বেশি। ঢাকার কড়াইল, সাততলা বস্তি, আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উল্টো দিকের বস্তিসহ বিভিন্ন বস্তি ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বনানী ১১ নম্বর সড়ক ধরে লেকের ডান পাশে কড়াইল বস্তি। লেকের পাড় ধরে জীর্ণশীর্ণ রাস্তার পাশে চা বিক্রি করেন রহিমা আক্তার। ১৫ বছর আগে নরসিংদী থেকে এ বস্তিতে আসেন বলে জানান তিনি। চা বিক্রি করে সংসার চালানো যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক রুমের খরচই চলে যায় ৫ হাজার টাকার বেশি। রুমে বড় বিছানার পর আলমারি ছাড়া আর কিছু রাখা যায় না। দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়ে টিকে থাকা যায় না। তাই পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিভিন্ন জায়গায় এ রকম দোকান দিয়েছেন বলে জানান তিনি। রহিমা জানান, কড়াইলে যে রুমে থাকেন সেখানে কোনো টয়লেট নেই। সকালে সিরিয়াল ধরে টয়লেটে যেতে হয়। আমার দুটি বড় মেয়ে আছে, কী যে অসুবিধা হয়, তা বলার মতো নয় বলেও জানান তিনি। কড়াইলের আরেক বাসিন্দা রিকশাচালক মো. খোরশেদ বলেন, এ বস্তিতে প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। ১০০ বর্গফুটের ছোট্ট একটি রুমে তিনি তার পরিবারের আরও দুই সদস্যকে নিয়ে বাস করেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ছোট্ট রুমটির জন্য তাকে প্রতিমাসে গুনতে হয় ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর সকালে সিরিয়াল ধরে টয়লেটে যাওয়া লাগে। এরপর বছর না ঘুরতেই ঘরের মালিক বাড়ান ভাড়া। এ ছাড়া কড়াইলে সব জিনিসপত্রের দাম ঢাকার অন্যান্য এলাকার থেকে বেশি। ফলমূল ও মাংসে তো হাতই দেওয়া যায় না।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উল্টো দিকের বস্তির বাসিন্দা নাজমা আক্তার। তিনি জানান, ১৯৯০ সালের দিকে ঢাকায় আসেন। এরপর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবন চালান তিনি। বাসা ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক রুমের ছোট একটি কক্ষ ভাড়া দিতে হয় ৫ হাজার টাকার বেশি। রুমে নেই টয়লেটের সুবিধা। তিনি বলেন, আগে তো কোনোরকমে সংসার চালাতে পারতাম। কিন্তু এখন সবকিছুর দাম এত বাড়ছে যে, কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না। দুই বেলা খাওয়াটাও আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। বস্তিবাসীদের জীবনযাত্রার ব্যয়ে কীভাবে লাগাম টানা যায় এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, বস্তির মানুষের জন্য সরকার থেকে বহুতল ভবন করে আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ ছাড়া বস্তির মানুষের জন্য টিসিবির পণ্যের পরিধি বাড়িয়ে দিতে হবে। বস্তির মানুষের প্রোটিনের অভাব রয়েছে। তার জন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কম দামে মাছ, মাংসের ব্যবস্থা করতে হবে। বস্তির মানুষের পরিসংখ্যান করতে হবে কারণ বস্তির মানুষের ঠিক সংখ্যা জানা নেই। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে বস্তির মানুষের ওপর। তাদের আয় সীমিত। তারা তাদের আয়ের বেশির ভাগ অংশ খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাতেই খরচ শেষ হয়ে যায়। দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হওয়ায় সরকারকে বস্তির মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ খবর