মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তবে কেউ কেউ প্রমাণ করেন মানুষ স্বপ্নের চেয়েও বড়। তারাই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দান করেন। এমনই একজন স্বপ্নবাজ তরুণ বাংলাদেশের সাইক্লিস্ট তাম্মাত বিল খয়ের। বিশ্বের প্রথম সাইক্লিস্ট হিসেবে মাত্র ৩০ দিনে সাইকেলে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প জয়ের বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তিনি। একই সঙ্গে তিনি চারটি পর্বত ও তিনটি পাস পাড়ি দিয়েছেন। এটাই বিশ্বের একমাত্র রেকর্ড।
এর আগে কেউ এই দুঃসাহস কখনো দেখায়নি। এমন রেকর্ডের পর থেকে তাম্মাতের ফেসবুক ভেরিফাইড পেজ সারাবিশ্বের সাইক্লিস্টদের অভিনন্দন বার্তায় ভরে যায়। গোটাদেশের মানুষকে গর্বিত করেছেন চট্টগ্রামের এই সাইক্লিস্ট তাম্মাত বিল খয়ের। মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল প্রতিটি পদে পদে। কিন্তু যে সাহসী তাকে রুখবে এমন সাধ্য কার!
তাম্মাত বিন খয়ের গত ২৭ নভেম্বর ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাইকেলে এভারেস্ট জয় খুব সহজ ছিল না। আমাকে অসংখ্যবার মৃত্যুর মতো ঝুঁকিপূর্ণ পথ পেরোতে হয়েছে। প্রচ- ঠান্ডা বাতাসে কাবু করে ফেলেছে বারবার।
দূঃসাহসিক এই অভিযানের নানা মুহূর্তের বর্ণনা করছিলেন তাম্মাত। নিরাশও হতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। তাম্মাত বিল খয়ের বলেন, তখন সবে মাত্র ২ হাজার ফিট আরোহন করেছি হঠাৎ পায়ে প্রচ- চোট লাগলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। ফের নিজে থেকেই সাহস জুগিয়ে প্রচ- সাহসিকতায় পথ পাড়ি দিতে থাকি। বস্তুত সাইকেলে এভারেস্ট জয় যতটা সহজ ও আনন্দের ভেবেছিলাম বাস্তবে ততটাই কঠিনতর হয়েছে। তাম্মাত বিল খয়ের বলেন, নিজের জন্মদিনে দেশকে এক ঐতিহাসিক রেকর্ড উপহার দিতেই আমার এই দুর্গম পথ অতিক্রম করা। ইনশা আল্লাহ সবার অশেষ দয়ার বরকতে রেকর্ড ভাঙা হয়নি, তৈরি করতে পেরেছি। নিঃসন্দেহে এটা আমাদের দেশের জন্য সর্বোচ্চ গর্বের বিষয়। তাম্মাত বিল খয়ের এরই মধ্যে প্রথম বাংলাদেশি সাইক্লিস্ট হিসেবে সাইকেল নিয়ে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, পিকে পিক, চুখুং রি পিক, কংমালা পাস, কালা পাত্থার, চোলা পাস, গোকিও রি পিক শেষ করেছেন। লম্বা সময় ধরে সাইক্লিং করে তাম্মাত শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। ২৭ নভেম্বর নিজের জন্মদিনে ৫৩৬০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত রেনজো লা পাসে উঠে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন তরুণ এই সাইক্লিস্ট। এর আগে একই সফরে কোনো সাইক্লিস্ট একই সঙ্গে এই ৮ অর্জন ছুঁতে পারেননি। এ ছাড়াও তাম্মাতের ঝুঁলিতে রয়েছে আরও বহু পুরস্কার। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের দীর্ঘতম সড়ক হেঁটেছেন তাম্মাত। প্রতিযোগিতামূলক খেলায় তিনি বাংলাদেশ তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ, বাংলাদেশ গেমস ২০২০ এ রৌপ্য এবং ২০২২ সালে ৪১তম জাতীয় সাইক্লিং চ্যাম্পিয়নশিপে আরেকটি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। গত সাত বছরে নিজেকে একজন প্রভাবশালী সাইক্লিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাম্মাত। এই সাইক্লিস্টের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তবে জন্ম, শৈশব ও বেড়ে ওঠা তার চট্টগ্রামে। বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেয়ামত আলী সিকদার, মা গৃহিণী নুরজাহান বেগম। ছয় ভাই, এক বোনের মধ্যে তাম্মাত সবার ছোট। চট্টগ্রামের আগে থেকেই ব্যাপক পরিচিত সাইক্লিস্ট তাম্মাত। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশের ৬৪টি জেলায় সাইকেলে ভ্রমণ করে এরই মধ্যে রেকর্ড করেছেন এই তরুণ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের ইস্ট ওয়েস্ট হাইওয়ে সাইক্লিং অভিযান সম্পূর্ণ করেছেন তিনি। ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় মহাসড়ক কভার করে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সাইক্লিং অভিযানেও অংশ নেন চট্টগ্রামের এই তরুণ।