২০২৬ সালের ডিসেম্বরে পাতাল রেলে চড়বেন ঢাকাবাসী। এ পরিকল্পনা নিয়ে মেট্রোরেল লাইন-১ এর নির্মাণ কাজ চলছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তবে এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সময় দীর্ঘায়িত হলে বাড়বে নির্মাণ ব্যয়ও। ২০১৯ সালের অক্টোবরে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এরপর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা তৈরিতে বিলম্বের কারণে প্রথম ঠিকাদার নিয়োগ করতে তিন বছর লেগে যায়। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে রূপগঞ্জের পীতলগঞ্জে মেট্রোরেলের ডিপোর জমি উন্নয়নের জন্য জাপান-বাংলাদেশ জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। বর্তমানে ভূমি উন্নয়নের কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। আগামী ২১ জুলাই (প্যাকেজ-১২ এর) প্রকল্পের মূল কাজের দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে।
এ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কাসেম ভুইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে চাই। সবাইকে সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানেও কোনো সমস্যা নেই। যেসব প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ বাকি রয়েছে সেগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করি, ২১ জুলাইয়ের মধ্যেই নিয়োগ করা হবে। পাঁচ বছর আগে দেশের প্রথম পাতাল (আন্ডারগ্রাউন্ড) মেট্রোরেল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও এর মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ এখনো শুরুই হয়নি। ২১ জুলাইয়ের পর শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে সরকারের পরিকল্পনা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর কাজ সমাপ্ত হবে বলে ধরা হলেও তা শেষ করা সম্ভব নয়। এজন্য অন্তত ৫ বছর সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের সঙ্গে জড়িত একজন প্রকৌশলী বলেন, এটা একটা আকাশ কুসুম চিন্তা যে, দেড় বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, এমআরটি লাইন-১ (পাতাল ও উড়াল) এর কাজ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এখন পর্যন্ত ১২টি প্যাকেজের মধ্যে মাত্র একটির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করতে পেরেছে সংস্থাটি। অন্যান্য প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশা করছে, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এসব প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হবে। সে হিসাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হাতে সময় আছে দেড় বছর। এই প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা পূরণ করা সম্ভব নয়। প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন-চার বছর বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। ফলে ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়তে পারে।
জানা গেছে, এমআরটি লাইন-১ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কমলাপুর রেলস্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করবে। পূর্বাচল এবং নারায়ণগঞ্জের কিছু অংশও এই মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ (পাতাল) দিয়ে। নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। মোট স্টেশন থাকবে ১৯টি। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন আট লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন। বাংলাদেশে পরিবহন খাতে এটাই হবে বৃহত্তম একক প্রকল্প। এতে ঢাকা শহরে যানজট ও দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।