সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত বর্ধিত আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয় কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা। সিপিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দুই মাস আগে শুরু হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনার সমাপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অব্যাহত এ আলোচনায় অনেক বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছি এবং বেশ কিছু বিষয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। খুব শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করা হবে। যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে তা বিষয়ভিত্তিকভাবে আলোচনা করে দ্রুত জাতীয় সনদ তৈরিতে অগ্রসর হতে পারব। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে আলোচনায় দলটির সভাপতিম লীর সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষসহ সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী, আবিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা এবং লুনা নূর উপস্থিত ছিলেন। সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০ মার্চ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করে কমিশন। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে কমিশন।
নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র সংস্কার বাস্তবায়ন করার দাবি সিপিবির : গতকাল আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য দলটি কমিশনের কাছে বিভিন্ন দাবি পেশ করেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি থাকতে পারে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কমানোরও প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী গণভোটের প্রয়োজন নেই বলে মনে করে দলটি। ৯০ দিন মেয়াদি নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি জানিয়েছে সিপিবি। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ও রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি বাতিল অবাস্তব বলে জানিয়েছে তারা। বিদ্যমান সংসদের ওপরেই আস্থা রয়েছে দলটির। এজন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ তারা চান না। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, তাদের প্রধান কাজ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এটার জন্য যে যে সংস্কার করা দরকার সেগুলো করতে হবে। জনগণ ক্ষমতার মালিক এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এজম্য আমরা মৌলিক সংস্কার চাই। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন যতদিন বন্ধ করা যাবে না ততদিন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে না।