দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগও বলছে, আগামী ১২ ঘণ্টায় দিন-রাতের তাপমাত্রা বাড়বে। কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সকাল ৯টার মধ্যে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
আমাদের ফেনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। পানি কমায় ঘরে ফিরছে বন্যার্ত মানুষ। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সব প্রধান নদনদীর পানির সমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফেনী জেলার সিলোনিয়া ও মুহুরী নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি লাভ করতে পারে। এ অববাহিকায় আগামী তিন দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরবর্তী চার দিন নদীগুলোর পানির সমতল বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এ অববাহিকায় আগামী পাঁচ দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ১২ ঘণ্টা ওই নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী ও সাঙ্গু নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল স্থিতিশীল আছে ও যমুনা নদীর পানির সমতল বাড়ছে, যা আগামী এক দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী চার দিন পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে ও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে ফেনী ও এর তৎসংলগ্ন অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বন্যানিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছে ঢাকাস্থ ফেনীবাসী। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
আশ্রয় কেন্দ্রে বোবাকান্না : হাসিনা বেগমের সংসারে শাশুড়ি, স্বামী, দুই ছেলে এক মেয়ে আছে। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় ফুলগাজী পাইলট স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। বন্যায় হাসিনার চুলায় রান্না হয়নি। ছেলেমেয়েরা মায়ের কাছে শুধু ভাত ভাত বলে কান্না করছে। ভাত চাইলে চিঁড়া-মুড়ি খেতে দেন হাসিনা। দু-এক মুঠো চিঁড়া-মুড়ি খেয়ে হাসিনার বাচ্চারা ভাতের জন্য কান্নাকাটি শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার ফুলগাজী পাইলট হাইস্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। ওই এলাকায় আরও দেখা যায়, বন্যার্তরা যে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ওই স্কুলের মাঠে বুকসমান পানি। ডুবে গেছে স্কুলের টিউবওয়েল। রাস্তায় তখনো কোমরসমান পানি। স্কুলের মাঠে মাছ ধরছেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। স্কুলের নিচতলায় আশ্রয় নিয়েছে ৩০টি পরিবার। স্কুলের নিচতলা থেকে হাসিনা হাতের ইশারায় জানান, আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চান। তার শাশুড়ি, স্বামী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ ঠাঁই হয়েছে স্কুলের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। তার বাচ্চারা ক্ষুধায় অনবরত কান্নাকাটি করছে। কান্নার স্বরে হাসিনার বাচ্চা মেয়ে বলল, আংকেল আমি ভাত খাব, মায়ের কাছে ভাত চাইলে শুধু চিঁড়ামুড়ি খেতে দেয়।
উপদেষ্টার পরিদর্শন : ফেনীতে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ফেনীর ফুলগাজী আলী আজম উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
নোয়াখালী : টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর গত দুই দিন নোয়াখালীতে রোদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করেছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে দুভোর্গ কমেনি। বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।