শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার নামে পূবালী ব্যাংকে থাকা একটি লকার জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। গতকাল সকালে রাজধানীর মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনে অবস্থিত পূবালী ব্যাংকের করপোরেট শাখায় অভিযান চালিয়ে লকারটি জব্দ করা হয়।
সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবীব জানান, ওই ব্যাংক শাখার ১২৮ নম্বর লকারটি শেখ হাসিনার নামে রয়েছে বলে তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
পূবালী ব্যাংকের ট্রেজারিতে দেখা যায়, দুই বোনের নামে ১৯৭৩ সালে খোলা লকারটি ৫২ বছর ধরে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর পর সচল রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনার সর্বশেষ আয়কর নথিতেও লকারটির তথ্য উল্লেখ ছিল।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, পূবালী ব্যাংকের ওই শাখায় শেখ হাসিনার দুটি ব্যাংক হিসাবও চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে ১২ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) এবং অন্যটিতে ৪৪ লাখ টাকা জমা রয়েছে। সর্বমোট ৫৬ লাখ টাকার এ দুটি হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। একজন জ্যেষ্ঠ কর গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বৃহত্তর তদন্তের স্বার্থে শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাব ও লকার জব্দ করা হয়েছে। লকারে স্বর্ণালংকারসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র থাকতে পারে। তবে সঠিক তথ্য জানা যাবে আদালতের নির্দেশে লকার খোলার পর।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, আদালতের নির্দেশে লকারটি জব্দ করা হয়েছে এবং বর্তমানে এটি এনবিআরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। লকার খোলার জন্য দুটি চাবির প্রয়োজন হয়। একটি ব্যাংকের কাছে থাকলেও অপরটি শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে। এখন আইনানুগ প্রক্রিয়ায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওই দিনই শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। এনবিআরের এ অভিযান সেই তদন্তের অংশ হিসেবেই পরিচালিত হয়েছে। বিএফআইইউর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত হাসিনাসহ তার পরিবারের ফ্রিজ করা হিসাবে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা রয়েছে।
হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন মাহমুদুর রহমান-নাহিদ ইসলাম : জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়েছে। গতকাল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহমুদুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা ব্যক্তিগত কারণে আসতে পারেননি বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। তাই আগামী সোমবার দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৪৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল প্রসিকিউশনের এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার মামলায় আজ (গতকাল) ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল মাহমুদুর রহমান ও জুলাই গণ অভ্যুত্থানের নায়ক নাহিদ ইসলামের। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তারা আসতে না পারায় ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চাওয়া হয়। পরে সময় মঞ্জুর করে নতুন দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই এ দুজন সাক্ষী নিজেদের সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।