রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে হল সংসদে চূড়ান্ত প্রার্থী ৫৯৭ জন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন ৩৯ জন। চার পদে কেউ মনোনয়ন তোলেনি। গতকাল কমিশনের প্রকাশিত তথ্যানুসন্ধানে এসব জানা গেছে।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. সেতাউর রহমান বলেন, ‘যেহেতু চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেহেতু পদ ফাঁকা রেখেই নির্বাচন দিতে হবে। যেসব পদে একাধিক প্রার্থী নেই, সেসব পদে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।’
কমিশনের তথ্যানুসারে, রাকসু, সিনেটে ছাত্রপ্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনে ৯০৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৪৮, সিনেটে ছাত্রপ্রতিনিধি ৫৮ ও ১৭ হল সংসদে ৫৯৭ জন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন বিজয়-২৪ হলে তিনজন, মুন্নুজান হলে একজন, রোকেয়া হলে ছয়জন, তাপসী রাবেয়া হলে তিনজন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১০ জন, রহমতুন্নেসা হলে নয়জন এবং জুলাই-৩৬ হলে সাতজন। এ ছাড়া চার পদে কেউ মনোনয়ন তোলেনি। এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া হলে সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদ; রোকেয়া, জুলাই-৩৬ এবং রহমতুন্নেসা হলে কার্যনির্বাহী সদস্য একটি করে তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে, নির্বাচনে ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। ছাত্র ১৭ হাজার ৫৯৬ ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন। ১৭ আবাসিক হলের মধ্যে ১১ ছাত্র ও ছয় ছাত্রী হল সংসদে ২৫৫ পদের বিপরীতে প্রার্থী ৫৯৭ জন। ছাত্রী হলে ১৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছাত্র হলে ভিপি ৬১, জিএস ৫৮ ও এজিএস পদে ৫৭ জন। ছাত্রী হলে ভিপি ১৬, জিএস ১৬ ও এজিএস পদে ১৫ জন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি ১৮, জিএস ১৩ ও এজিএস পদে ১৬ জন লড়বেন। এদিকে কেন্দ্রীয় সংসদ ও সিনেটে প্রতিনিধি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ প্যানেলের প্রার্থীরা। এর মধ্যে ছাত্রদল সমর্থিত ‘আবীর-জীবন-এষা’ পরিষদ, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেইঞ্জ’, বামজোট সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র ইউনিয়ন একাংশ সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১’, ‘অপ্রতিরোধ্য ২৪’, কিছু সমন্বয়ক সমর্থিত ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ ও ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’ ও ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের ‘ইনডিপেনডেন্ট স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স’ এবং ‘ইউনাইটেড ফর রাইটস’। রবিবার ব্যালট নম্বর ঘোষণার পর প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা। আচরণবিধি অনুসারে, ১৫ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত এ প্রচার চলবে। প্রার্থী ও ভোটার ছাড়া অন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবে না। প্রচারে সাদা-কালো ৬০ সেমি দৈর্ঘ্য ও ৪৫ সেমি প্রস্থের পোস্টার ব্যবহার করা যাবে। তবে ভবনের দেয়ালে লেখনী ও পোস্টার লাগানো যাবে না। প্রার্থী পরিচিতি সভা ছাড়া অন্য কোনো সভায় মাইক ব্যবহার করা যাবে না। ছাত্রদের আবাসিক হলে ছাত্রী এবং ছাত্রীদের আবাসিক হলে ছাত্র, সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে পরিচিতি সভায় প্রবেশ করতে পারবেন। ক্যাম্পাসে কোনো সভা করতে হলে সভার স্থান ও সময় সম্পর্কে প্রক্টরকে জানাতে হবে। নির্বাচনি কার্যক্রম চলাকালে সবাইকে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। বহিরাগত কেউ আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবে না। একাডেমিক ভবনের অভ্যন্তরে মিছিল, সমাবেশ করা যাবে না; প্রচারে কোনো প্রকার মিডিয়ায় মানহানিকর আচরণ, অশালীন উক্তি ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিলে সংশ্লিষ্টকে তৎক্ষণাৎ শাস্তির আওতায় আনা হবে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে প্রাতিষ্ঠানিক বিধি অনুসারে শাস্তি দেওয়া হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যথানিয়মে প্রার্থীরা প্রচার করতে পারবেন। কেউ বিধি ভঙ্গ করলে শাস্তি পাবেন।’ রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, ‘বহু গুজব রটেছে অমুকে এ কারসাজি করছে, তমুকে সেই কারসাজি করছে। অথচ প্রশাসনে ও নির্বাচন কমিশনে যারা আছি, তারা কারসাজির ক-ও বুঝি না।’ গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে রাকসু কী-কেন শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেন তিনি। উপাচার্য বলেন, ‘হারলেই খেলা ভালো হয়নি, এমন আচরণের চেয়ে বাজে কিছু আর হয় না। নিশ্চিত করে বলতে পারি, সারা জীবনে আমি কোনো কারসাজি করিনি, ভবিষ্যতেও কোনো কারসাজির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। কাজেই এ আস্থাটা রাখতে হবে।’
প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান বলেন, ‘ডাকসু, জাকসু নির্বাচন হওয়ার পর রাকসু এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।’ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান। সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. নিজাম উদ্দীন ও অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ।
রাকসু নির্বাচনে একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম দুই দিন বন্ধ ঘোষণা : রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচন উপলক্ষে ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা ও অফিস বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া অতি জরুরি বিভাগ যথা পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, প্রহরাব্যবস্থা, টেলিফোন যথারীতি চালু থাকবে। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ থাকে। যেহেতু একাডেমিক ভবনে নির্বাচন হবে তাই দুই দিন ছুটি।’