দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে সারা দেশে ৬৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় মশাবাহিত এ রোগের চিকিৎসায় ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪১ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৯ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪ জন এবং সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুজন রয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় ৬৫২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবৎ মোট ৩৭ হাজার ১৮০ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯ হাজার ১৯২ জন। এর মধ্যে ৬০ দশমিক দুই শতাংশ পুরুষ এবং ৩৯ দশমিক আট শতাংশ নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। চলতি বছরে এ যাবৎ ডেঙ্গুতে মোট ১৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় মশাবাহিত এ রোগের চিকিৎসায় ১২- দফা জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক, জেলার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান নির্দেশনার ওই চিঠি পাঠিয়েছেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডেঙ্গু রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে এনএসওয়ান পরীক্ষা করতে হবে। এনএসওয়ান/অ্যান্টিজেন কিটের জন্য সিএমএসডি অথবা সিডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ভর্তি রোগীদের জন্য হাসপাতালে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। ভর্তি হওয়া রোগীদের হাসপাতালের নির্দিষ্ট ওয়ার্ড বা কক্ষে রাখতে হবে। ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য মেডিসিন, শিশু ও প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করতে হবে। বোর্ডের তত্ত্বাবধানে মেডিকেল অফিসার, রেসিডেন্ট ও প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করতে হবে, যারা কেবল এই রোগীদের চিকিৎসা করবেন। বহির্বিভাগে আসা রোগীদের মধ্যে যারা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হবে।
আইসিইউর প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে সুবিধা থাকলে ডেঙ্গু রোগীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। রোগীর তথ্য সংরক্ষণ ও প্রেরণের জন্য একজন নার্সকে দায়িত্ব দিতে হবে। কোনো ডেঙ্গু রোগী মারা গেলে সংক্ষিপ্ত তথ্য ৬ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল পরিচালক/তত্ত্বাবধায়ক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (হাসপাতাল ও সিডিসি) জানাতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। হাসপাতাল এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মশক নিধন কার্যক্রম চালানোর জন্য সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দেবেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক। প্রতি শনিবার সকালে হাসপাতালের পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক বা সিভিল সার্জনের সভাপতিত্বে ডেঙ্গু সমন্বয় সভা করতে হবে। অন্যান্য জেলা হাসপাতাল প্রয়োজনে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারবে।