জাতিসংঘের আসন্ন ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূতের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক। এসব বৈঠকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বিশেষ করে এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন থেকে রোহিঙ্গা সংকটের একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান পেতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য গত এক বছরে কূটনৈতিকভাবে বিশেষ তৎপরতা চালিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঢাকা ও কক্সবাজারে এ-সংক্রান্ত সম্মেলনও করেছে। এর সঙ্গে আগামী বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর বিষয়ে আবেদনের যে আলোচনা চলমান সে-সংক্রান্ত একটি পৃথক প্রস্তাবনাও তুলে ধরা হবে। প্রধান উপদেষ্টা দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতিসংঘ অধিবেশনে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি। একই সঙ্গে কূটনৈতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে চীন ভারত জাপান যুক্তরাষ্ট্র ইইউ বিশ্বব্যাংক আইএমএফ ইউএসএইড ইউকেএইডসহ সব উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গাসহ শরণার্থীবিষয়ক বিশেষ অধিবেশন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি জাতিসংঘের অধিবেশনে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে দেশ থেকে বিভিন্ন সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতেও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আবারও সহায়তা চাইবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ড. ইউনূসের ফেসভ্যালু তো অবশ্যই একটা বড় ফ্যাক্টর। সারা বিশ্বে তাঁর যে পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা সেটাকে কাজে লাগাতে পারলে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক যে কোনো প্ল্যাটফর্মে রোহিঙ্গা সংকট, আর্থিক সংকট এমন কি বিশ্বের নানা ধরনের সংকট সমাধানে বাংলাদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আমরা হয়তো তার কিছুটা প্রতিফলনও দেখতে পাব।
জানা গেছে, জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে এবারের আলোচ্যসূচির মধ্যে আছে ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ইতালি, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, কসোভো, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দলের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এবার উচ্চপর্যায়ের সভার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের অনুষ্ঠান শুরু হবে। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে বিতর্ক পর্ব। ওই দিন থেকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা সাধারণ বিতর্কে অংশ নেবেন। জাতিসংঘের তিনটি মূল স্তম্ভ শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার সবই সমানভাবে এবারের অধিবেশনে গুরুত্ব পাবে। এজন্যই রোহিঙ্গা ইস্যুকে অনেক বড় ইস্যু হিসেবে জাতিসংঘে তুলে ধরা হবে। কেননা রোহিঙ্গা সংকট একদিকে বাংলাদেশের আন্তঃআঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের আর্থিক সংকটকেও ঘনীভূত করছে। এজন্য রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক সংকট হিসেবে মূল্যায়ন করে কূটনৈতিকভাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চায় সরকার।
২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে বিগত এক বছরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সংস্কার ও আগামী দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
অর্থবিভাগের একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে। এজন্য শুরুতেই বাজার ব্যবস্থায় নজর দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সব উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এজন্য বাৎসরিক বাজেট ঘাটতি ও ডলার সংকট কাটিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে বহুমুখী তৎপরতায় নেমেছে সরকার। চীন ভারত জাপান যুক্তরাষ্ট্র ইইউ বিশ্বব্যাংক আইএমএফ ইউএসএইড ইউকেএইডসহ সব উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সরকার।