ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে মরণনেশা আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। সেবনকারীদের মধ্যে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার কারণে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে এখন অনেক মাদকাসক্তই তা ব্যবহার করছেন। ফলে চার বছরে আইসের চাহিদা বেড়েছে চার গুণ। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জলে-স্থলের ২০ রুট দিয়ে ঢুকছে এ মরণনেশা। আইস আসে মিয়ানমার থেকে। তার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো দেশে। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকার মাদক নিয়ে গবেষণা করছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে আইসের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের শহর অঞ্চলে। আইসের প্রতিক্রিয়া বেশি হওয়ায় সেবনকারীরা ইয়াবার বিকল্প হিসেবে তা ব্যবহার করছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও বিপুল আইস জব্দ করেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর জিগাতলায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫ গ্রাম
আইসসহ জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এটিই ছিল দেশে আইস জব্দের প্রথম ঘটনা। ক্রমান্বয়ে ইয়াবার স্থান দখল করতে শুরু করে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। ২০২১ সালে ৩৬ দশমিক ৭৯৪ কেজি আইস জব্দ করে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। ২০২২ সালে এ জব্দের পরিমাণ তিন গুণের বেশি বেড়ে হয় ১১৩ দশমিক ৩৩১ কেজি। ২০২৩ সালে ১৮৬ দশমিক ৬৩২ কেজি আইস জব্দ করা হয়। ২০২৪ সালে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিষ্প্রভ ভূমিকার মধ্যেও ১১০ দশমিক ৫২৭ কেজি আইস জব্দ করা হয়। চলতি বছরের ৯ মাসে এ সংখ্যা দুই কেজি ছাড়িয়ে গেছে এমন ধারণা করা হচ্ছে। জানা যায়, ভয়ংকর মরণনেশা আইস তৈরির মূল উপাদানই হচ্ছে এমফিটামিন। ইয়াবায় এ এমফিটামিন ব্যবহার করা হয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। আইসে এ উপাদান থাকে প্রায় শতভাগ। উচ্চমাত্রার কারণে এ মাদক দ্রুতই সেবনকারীদের শরীরে প্রতিক্রিয়া শুরু করে। ফলে দ্রুত বাড়ছে এ ভয়ংকর মাদকের চাহিদা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বাংলাদেশে আইসের জোগানের নেপথ্যে কাজ করছে রাখাইন রাজ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার ভিত্তিক সশস্ত্র ট্র্যান্সনেশন গ্রুপগুলো। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ-সংক্রান্ত দপ্তর (ইউএনওডিসি) ২০২৩ সালের জুনে প্রকাশিত আইস নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশের সুপার ল্যাবে তৈরি আইস ছড়িয়ে পড়া থামানো যাচ্ছে না। বিশ্বের বৃহত্তম আইসের বাণিজ্যের মূল হচ্ছে মিয়ানমারের সান রাজ্য। মাদক পাচারকারীরা লাওসের সীমানা, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সীমানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ আইস পাচার করে থাকে। বাংলাদেশেও প্রচুর আইস পাচার হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সফরের সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আরাকান আর্মি মাদক নির্ভরশীল, প্রচুর আইস ও ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে।
আমরা আলোচনা করছি, যাতে মাদক ঢুকতে না পারে। মাদক আমাদের সমাজকে ধ্বংস করছে। এজন্য আমরা ফোর্স বৃদ্ধি করেছি, মাদক সমস্যা কমে আসবে।