অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (আইএনসিবি) সম্মেলনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রযুক্তি দ্বারা মাদক শনাক্তের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। শিশু নির্যাতনমূলক কনটেন্টের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাদকের চালান শনাক্তের জন্য বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইএনসিবির সমঝোতা চুক্তির পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের পাচারের বিপরীতে দ্বিতীয় বৈশ্বিক প্রযুক্তি সম্মেলনে গতকাল এমন যুগান্তকারী প্রস্তাব দিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ। সঙ্গে রয়েছেন উপপরিচালক মেহেদী হাসান। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বেলা সোয়া ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্যানেলে বাংলাদেশ অংশ নেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে এ প্যানেলে ছিল অস্ট্রিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, শ্রীলঙ্কা। ডিএনসির ডিজি হাসান মারুফ তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন মাদক নিয়ন্ত্রণে এআইকে কাজে লাগানো উচিত। এআইনির্ভর মাদক শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার জন্য ‘ডিজিটাল মাদক গোয়েন্দা ও প্রতিক্রিয়াব্যবস্থা’ (ডিএনআইআরএস) নামে একটি নামও প্রস্তাব করেছেন তিনি।
ডিজিটাল প্রেজেনটেশনে বাংলাদেশের মাদকের চিত্র তুলে ধরেন ডিএনসি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মাদক কারবারিরা মাদক কেনাবেচায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। তারা গোপন বার্তা আদানপ্রদানের বিশেষ মোবাইল অ্যাপ, সাংকেতিক ভাষা ও ভার্চুয়াল অর্থব্যবস্থার (ক্রিপটোকারেন্সি) মাধ্যমে পাচার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এনক্রিপটেড হওয়ার কারণে এসব সাইটে নজরদারিও সম্ভব হয় না। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষে মাদক লেনদেনের উৎস ও পথ শনাক্ত করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেক অভিযান ব্যর্থ হয় শুধু যোগাযোগের গোপনীয়তার কারণে।’
বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ যুক্ত করে এ গোপন নেটওয়ার্কগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করার, যাতে বার্তার ধরন, সাংকেতিক ভাষা, ছবি ও আর্থিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে পাচারকারীদের শনাক্ত করা যায়। বাংলাদেশের প্রস্তাব করা ‘ডিএনআইআরএস’ গঠনের জন্য ‘আইএনসিবি’ ও বিশ্বের বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান যেমন মেটা, গুগুল, হোয়াটস অ্যাপ, টেলিগ্রামের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি (সমঝোতা স্মারক) করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ সহযোগিতার আওতায় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিদ্যমান এআই দিয়ে ছবি শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। যেভাবে বর্তমানে গুগল বা অন্য প্রতিষ্ঠানসমূূহ শিশু নির্যাতনমূলক ছবি শনাক্তে ‘ছবি ডিএনএ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করছে।
বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী, এ প্রযুক্তিতে যদি মাদক সম্পর্কিত ছবি, চিহ্ন, কোডওয়ার্ড, আর্থিক লেনদেনের প্যাটার্ন এবং সাংকেতিক সংকেত সংযোজন করা যায় তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজে থেকেই মাদক চক্রের তথ্য শনাক্ত ও হালনাগাদ করতে পারবে। এর ফলে আইএনসিবির সদস্যভুক্ত দেশগুলো রিয়েল টাইম গোয়েন্দা তথ্য পাবে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাদকের প্রবাহ ঠেকাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
বন্দরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযুক্তি : ডিএনআইআরএস-ব্যবস্থাকে সরাসরি বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের স্ক্যানিং যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বলেছে, যখন কোনো লাগেজ বা পণ্য স্ক্যান করা হবে, সেই ছবি বা তথ্য সঙ্গে সঙ্গে ডিএনআইআরএস সার্ভারে পাঠানো হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তা বিশ্লেষণ করে যদি মাদকের উপস্থিতি সন্দেহ করে, তখনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্কবার্তা পাঠাবে।
ডিজি হাসান মারুফ বলেন, ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ এখন শুধু মাঠপর্যায়ে নয়, ডিজিটাল জগতেও। প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে বৈশ্বিক সহযোগিতাই একমাত্র পথ। শিশু নির্যাতনমূলক কনটেন্টের মতো মাদক শনাক্তেও টেক প্ল্যাটফর্মগুলোর সহায়তা নিতে পারে আইএনসিবি।’