ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী দেবী চৌধুরানীর স্মৃতিবিজড়িত রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছের সারাই ইউনিয়নে অশ্বাক্ষুরাকৃতির ধুম নদ নামে একটি বিল রয়েছে। এই নদের ওপরে একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে দুই পাড়ের প্রায় ২০ হাজার লোক যাতায়াত করে প্রতিদিন। এ ছাড়া ধুম নদের ওপর নির্ভরশীল শত শত জেলে পরিবারের জীবিকা। নির্বাচনের পর নির্বাচন এলেও এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা কোনো জনপ্রতিনিধিই উপলব্ধি করেননি। ফলে বিলের দুই পাশের মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারী হচ্ছে।
জানা গেছে ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হওয়ার ২০-৩০ বছরের মধ্যে রংপুর থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন নবাব নুর উদ্দিন জং বাকের, ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানীরা। ধুমগড়ে ছিল দেবী চৌধুরানীর গোপন আস্তানা। এখান থেকেই তিনি যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। দেবী চৌধুরানীর সময়ে ধুম নদে একটি বিশেষ ধরনের ঝুলন্ত সেতু ছিল। ইংরেজরা যখন আক্রমণ করত তখন সেতুটি গুটিয়ে ফেলা হতো। ইংরেজরা চলে গেলে আবার সেতুটি খুলে দেওয়া হতো। দেবী চৌধুরানীরা ইতিহাস হয়েছেন প্রায় আড়াই শ বছর আগে। একসময় ধুম নদ পার হতে হতো নৌকায়। ১৯৭৯ সালে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের এক প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাঁশের সেতু নির্মাণ করেন। ফলে নৌকা দিয়ে পারাপারের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হলেও নড়বড়ে সেতুটি আর পাকা হয়নি। ধুম নদবিষয়ক লেখক কবি শোয়েব দুলাল বলেন, ‘এই ধুম কোনো নদ না হলেও স্থানীয়রা এটিকে নদী হিসেবে বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এই বিল ঘিরে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ধুম নদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানে ব্রিজ নির্মাণ হলে ধুমের কুটি ও ভিতরকুটি এলাকার লোকজনের যাতায়াতে সুবিধা হবে।’ আলেফ উদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির পল্টু জানান, ১৪৪ একর জমির ওপর এই ধুম নদ বিল। এর দুপাশে রয়েছে একাধিক স্কুল ও মাদরাসা। যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি পারাপারের অনেকটা অযোগ্য হয়ে পড়ে। বিভিন্ন সময় স্কুলগামী ও বৃদ্ধ লোকজন সাঁকো ভেঙে পানিতে পড়ে আহত হয়েছেন। পারাপারে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিবারই ভোটের আগে প্রার্থীরা ব্রিজ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা নেননি।