বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা এখন মুক্ত বাংলাদেশে আছি। আমরা বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে এসেছি, এখন মন্ত্রীরা কোথায় সব? শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ পালিয়েছে। আমরা কি পালিয়েছি? বেগম জিয়া কি পালিয়েছে? আপনাদের নেতারা কি কেউ পালিয়েছে? পালায়নি।’
‘তারা আমাদের নেতাকর্মী ও ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা আবারো ফিরে আসার চেষ্টা করবে। আপনারা ১৬ বছর ধরে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। লাকসামের হিরু হুমায়ুনসহ আমাদের প্রায় ৭শ’ মানুষকে তারা গুম করেছে। আমাদের প্রায় ১ হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ তারা রাস্তার মধ্যে পাখির মতো ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করেছে। এদের হাত থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি, তবে স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করতে হবে।’
গতকাল শনিবার বিকালে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট আরিফুর রহমান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নাঙ্গলকোটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ-খবর নিতে ও তাদের সহায়তা প্রদানের জন্য মির্জা ফখরুল নাঙ্গলকোট সফর করেন।
মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যে আরো বলেন, ‘এ অঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা এসেছি। যেই ফ্যাসিবাদ আমাদের বুক থেকে সরে গেছে, তারা যেন আবার ফিরে আসতে না পারে। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে আমদের সহযোগিতা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বাধীনতাকে সুসংহত করতে হবে। অনেকেই মনে করছে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, যাই খুশি তাই করা যাবে, আমরা এমন করলে স্বাধীনতা থাকবে না, তারা আবার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিবে, আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করবে। আমরা বর্তমান সরকারকে ৩১ দফা দিয়েছি। এখন যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দেশ চলতে পারে না। দেশের অর্থনীতি ঢেলে সাজাতে হবে। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে, আমাদের মিডিয়াকে সাজাতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে সাজাতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইলেকশন কমিশনকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। দেশের সংস্কারে যে সময় লাগবে সেই সময় পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপিকে সকল মানুষের কাছে নিয়ে যাবো, আমাদেরকে কেউ যেন খারাপ না বলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘একটা কথা পরিষ্কার বলে দিতে চাই কোনো চাঁদাবাজি, দখলবাজি চলবে না। যারা এমন করবে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোর্পদ করবেন। তারা আমাদের দল ও দেশকে নষ্ট করতে চায়। আমি প্রশাসনকে বলবো যারা এইরকম করবে তাদেরকে গ্রেফতার করেন। আমরা সহযোগিতা করব। আপনাদের কাছে এ ওয়াদা চাই আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। সবাই একতা থাকবেন, আমরা সবাই বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। নিজেদের মধ্যে অশান্তি করবেন না। মানুষকে ভালোবাসা দিলে আপনারা অনেক দিন টিকে থাকবেন। আমরা বন্যার্ত মানুষের পাশে আছি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক নজির আহমেদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন নয়নের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী, বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম চৈতি কালাম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া প্রমুখ।
জনসভায় বিএনপি যুবদল ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের হাজার-হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। জনসভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাঙ্গলকোট উপজেলার বন্যার্ত দুই হাজার পরিবারের মাঝে বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ