কফিনে তা হলে খুলি ছাড়াই প্রায় আড়াইশ' বছর শুয়ে রয়েছেন শেক্সপিয়র! ২২০ বছরেরও বেশি আগে চোর হানা দিয়েছিল শেক্সপিয়রের কফিনে? আর যে সে চুরিও নয়। একেবারে খুলি চুরি!
সেই চুরির ‘খবর’ খুব ছোট্ট করে বেরিয়েছিল ‘আরগোসি’ নামে একটা ম্যাগাজিনে, ১৮৭৯ সালে। তাতে বলা হয়েছিল, ওই খুলিটা চুরি করা হয়েছিল ১৭৯৪ সালে। কিন্তু সে খবরে কেউ তেমন আমল দেননি।
কিন্তু, সেই ‘খবর’টা একেবারেই সত্যি ছিল। এমনটাই জানিয়েছেন স্ট্যাফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক কেভিন কল্স এবং ভূ-পদার্থবিদ এরিকা উৎসি।
ব্রিটেনের স্ট্র্যাটফোর্ডে হোলি ট্রিনিটি চার্চের প্রাঙ্গণে যেখানে সমাহিত করা হয়েছিল শেক্সপিয়রকে, সেখানে ওপর থেকে মাটি ফুঁড়ে ঢোকা রাডার (জিপিআর) দিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, কফিনে শেক্সপিয়রের মাথার বিকৃতি ধরা পড়েছে। গবেষকদের দাবি, শেক্সপিয়রের খুলিটা চুরি হয়েছিল বলেই তাঁর মাথার ওই বিকৃতি।
শেক্সপিয়রের মৃত্যুর ৪০০ বছর পূর্তির সময় এই প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারটি নিয়ে একটি ডকুমেন্টারিও বানানো হয়েছে। তার নাম- 'সিক্রেট হিস্ট্রি: শেক্সপিয়র্স’ টোম'। শনিবার যা প্রথম দেখানো হবে ব্রিটেনের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে। শেক্সপিয়রকে ওই জায়গাতেই সমাহিত করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অবশ্য ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে বিতর্ক ছিল বহু দিন ধরেই। তাঁদের বক্তব্য ছিল, জায়গাটা এতটাই ছোট যে, কোনও পূর্ণবয়স্ক মানুষের কফিন সেখানে রাখা সম্ভব নয়। সন্দেহের আরও একটি কারণ, সেখানে শেক্সপিয়র বা কোনও ব্যক্তির নামও লেখা হয়নি।
কিন্তু শেক্সপিয়রের খুলিটা যে সত্যি-সত্যিই চুরি হয়েছিল, সে ব্যাপারে কীভাবে নিশ্চিত হলেন গবেষকরা?
এক, মাটি খুঁড়ে খুলিটা চুরি করার পর জায়গাটা আবার নতুন করে মাটি দিয়ে যে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল, তার প্রমাণ মিলেছে। এটা করা হয়েছিল, যাতে সেখানকার মাটি না ধসে যায়।
দুই, রাডার দিয়ে এটাও দেখা গেছে, হোলি ট্রিনিটি চার্চের প্রাঙ্গণে যেখানে শেক্সপিয়রের স্ত্রী অ্যানা হ্যাথাওয়ে আর তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের সমাহিত করা হয়েছিল, সেই জায়গাটা মাটি থেকে খুব সামান্য নীচে। সাধারণত, কাউকে তার চেয়ে মাটির অনেক গভীরে সমাহিত করা হয়। অথচ শেক্সপিয়র আর তাঁর স্ত্রীর কফিন দু’টি মাটির এক মিটারেরও কম গভীরে রাখা রয়েছে!
তিন, সম্ভবত কোনও কফিনেও রাখা হয়নি শেক্সপিয়র আর তাঁর স্ত্রীর দেহ দু'টি। কারণ, সেখানে কফিনের কোনও ধাতব বস্তুর হদিশ মেলেনি। হয়তো দু’জনের দেহ শুধুই কাগজ বা গাছের ডালপালা, পাতা, ঝোপঝাড় বা আগাছা দিয়ে মুড়ে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল।
চার, শেক্সপিয়রের খুলিটি যেখানে রাখা রয়েছে বলে কেউ কেউ দাবি করতেন, ওরসেস্টারশায়ারের সেই সেন্ট লিওনার্ডস’ চার্চেও গিয়েছিলেন ওই গবেষকরা। তাঁরা দেখেছেন, ওই খুলিটি আদৌ শেক্সপিয়রের নয়। তা এক মহিলার। আর সেই মহিলা মারা গিয়েছিলেন ৭০ বছর বয়সে।
দুনিয়ার সব আবিষ্কারই যেমন রক্ষণশীলদের ধারণাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে, এই আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি।
হোলি ট্রিনিটি চার্চের রেভারেন্ড প্যাট্রিক টেলর বলেছেন, ''ওখান থেকে খুলিটা চুরি হয়েছিল, এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে বলে আমার মনে হয় না।''
শেষে আরও তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য টেলরের! বলেছেন, ''জোর-জবরদস্তি করে সত্যের অনুসন্ধান করায় কোনও বাহাদুরি নেই। বরং থাক না রহস্যটা!''
সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি-প্রতিদিন/২৫ মার্চ ২০১৬/ এস আহমেদ