টানা ১৪ ঘণ্টা মাটি খুঁড়ে ৪০ দিনে আস্ত একটা কুয়ো বানিয়ে ফেললেন যুবক। স্ত্রীর অপমানের কষ্ট মুছে দিতে এই কাজটি করেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের নাগপুরের ওয়াসিম জেলার কলম্বেশ্বর গ্রামে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষের আচার-আচরণে বাপুরাও নামের ওই যুবকের মনে ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ উস্কে দিয়েছিল মার্চ মাসের একটা ঘটনা। সেদিন তার স্ত্রী গ্রামের অন্য প্রান্তে এক উচ্চবর্ণের মানুষের কুয়োয় পানি তুলতে গিয়ে অপমানিত হন। ওই বাড়ির লোকেরা তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল নিম্নবর্ণের বলে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর মুখে সে কথা শুনেই মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল তার। তক্ষুণি বাজারে গিয়ে কুয়ো খোঁড়ার যন্ত্রপাতি কিনে আনেন। সেই সব যন্ত্রপাতি দিয়ে পরের দিন সকাল থেকেই কুয়ো খোঁড়া শুরু করেছিলেন। এদিকে, পেট চালাতে কাজও করতে হবে। স্ত্রী, দুই শিশু রয়েছে। তাই আট ঘণ্টার দিন মজুরির কাজেও যেতে হতো। দিনে ৬ ঘণ্টা করে বাপুরাও মাটি খুঁড়তেন, সপ্তাহে ৭ দিনই। কাজে যাওয়ার আগে, সকালে ঘুম থেকে উঠে চার ঘণ্টা করে মাটি খুঁড়তেন। আবার কাজ সেরে বাড়ি ফিরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’ঘণ্টা করে মাটি খুঁড়তেন তিনি।
কেউ তাকে সাহায্য তো করেইনি, উল্টো আশপাশ থেকে সকলে হাসাহাসি করতেন। দমে যাননি বাপুরাও। কারণ ওই এলাকায় কোনো জায়গায় পানির দেখা মেলেনি দীর্ঘদিন। তিন-তিনটে কুয়ো বন্ধ হয়ে গিয়েছে পানির অভাবে। একটা টিউবওয়েলও পানিশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে।
৮ ঘণ্টা মজুরের কাজে আর ৬ ঘণ্টা মাটি খোঁড়া দিনে মোট ১৪ ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ৪০ দিনে শেষমেশ মাটির ১৫ ফুট তলায় প্রচুর পানির সন্ধান পেয়ে যান বাপুরাও। বানিয়ে ফেলেছেন ৬ ফুট চওড়া কুয়ো। আরও ৫ ফুট গভীরতায় খোঁড়ার ইচ্ছা তার। আর কুয়োটাকে অন্তত ৮ ফুট চওড়া করবেন। এখন অবশ্য আশপাশের সকলে তার কুয়ো থেকেই পানি নিয়ে যায়। সবার মুখে বাপুরাওয়ের প্রশংসা।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ মে, ২০১৬/ আফরোজ