কেউ দেরিতে স্কুলে আসতো, কেউ ক্লাস চলাকালীন অমনযোগী, কারও বা আবার পরীক্ষায় খারাপ ফল-এই অপরাধে শিক্ষার্থীদের আদব-কায়দা শেখাতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অমানবিক শাস্তি দিলেন শিক্ষিকা। তাদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে পায়ের পাতার ওপর কর্পুর রেখে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর যতক্ষণ কর্পুর ছিল, ততক্ষণ জ্বলল সেই আগুন! ভয়ানক এই শারীরিক শাস্তির সাক্ষী হয়ে থাকলো ভারতের তামিলনাড়ুর একটি স্কুলের ১১ ক্ষুদে শিক্ষার্থী।
গত বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ুর উলুনদুড়পেটের কাছে পালি এলাকায় পঞ্চায়েত ইউনিয়ন মিডল স্কুলে ঘটনাটি ঘটে। স্কুলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১ জন, শিক্ষক মাত্র দুইজন। প্রধান শিক্ষক বরদারাজন ছাড়াও আছেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা এস বৈজয়ন্থী মালা (৫০)। দুই দশকের পুরোনো এই স্কুলটিতে গত ১২ বছর ধরে এই স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করে আসছেন পালি এলাকার বাসিন্দা বৈজয়ন্থী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিতে ১১ জন শিক্ষার্থীর নামের একটি তালিকা করেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা বৈজয়ন্থী। উচ্ছৃঙ্খল ও অমনোযোগী আখ্যা দিয়ে তাদের প্রত্যেককে হাঁটু গেড়ে বসতে বলা হয়। এরপর একে একে সবার পায়ের পাতায় কর্পুর রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর ওই শিক্ষিকা নিজেই জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খখলাবোধ তৈরি করতেই তিনি এমন কাজ করেছেন। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা যাতে বাসায় ফিরে গিয়ে এই ঘটনার কথা বাবা-মায়ের কাছে না বলেন তার জন্য ওই শিক্ষিকা হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। যদিও ঘটনার পরদিন নিজের বাচ্চাদের পায়ে ফোলা ও ফোস্কা দেখে সন্দেহ হওয়ায় বাবা-মায়েদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বাচ্চারা পুরো ঘটনা স্বীকার করে। এরপরই অভিবাবক এবং গ্রামবাসীরা ওই স্কুলে এসে চড়াও হয়। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে আটকের দাবিতে প্রধান শিক্ষককে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তারা। ওই ঘটনায় চতুর্থ শ্রেণির ছয়জন এবং পঞ্চম শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উলুনদুড়পেট সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
অগ্নিদগ্ধ এক ছাত্রী পুগাজেনথির মা ভানীথা (৩২) জানিয়েছেন, ‘শারীরিক শাস্তি দেওয়ার অভিযোগে বৈজয়ন্থী মালার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে’।
তবে ছুটিতে থাকায় এই ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দায় ঝেড়ে ফেলেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরদারাজন।
ঘটনার পাওয়ার পরই স্কুলটিতে ছুটে যান সিইও এস মার্সসহ শিক্ষা মন্ত্রালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকা এবং প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ জুন, ২০১৬/ আফরোজ