২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:০২

ঝাড়ফুঁকের ‘খদ্দের’ ধরতে হাসপাতালে ওঝার ‘দালাল’

অনলাইন ডেস্ক

ঝাড়ফুঁকের ‘খদ্দের’ ধরতে হাসপাতালে ওঝার ‘দালাল’

মানুষ এখন থেকে আগের থেকে অনেক বেশি জ্ঞ্যান রাখে। তারা এখন বিজ্ঞানসম্মত আর সভ্য চিন্তা করতে পারে। তাইতো এখন ওঝা, কবিরাজ, ঝাড়ফুঁক এসব বিষয়ের উপর থেকে ধীরে ধীরে ভরসা কমছে মানুষের৷ কিন্তু ঐসব ওঝা-কবিরাজদের কি হবে যাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য এই ঝাড়ফুকের উপরই ভরসা করত। এখন তাদের একরকম মাথায় হাত। তাইতো‘খদ্দের’ ধরতে সরকারি হাসপাতালে দালাল নামিয়েছে ওঝারা৷

হাসপাতালে বেড নেই, চিকিৎসা হবে না৷ প্রথমে এমন ভয় দেখানো হচ্ছে৷ কাজ না হলে রোগীর পরিবারের উপর জোর খাটানো হচ্ছে৷ ভারতের বারাসত হাসপাতালে এমনই ঘটনা ঘটেছে৷ সাপে-কাটা এক রোগীকে হাসপাতাল থেকে জোর করে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল এক দালাল৷ অভিভাবকরা সচেতন হওয়ায় ‘অঘটন’ অবশ্য ঘটেনি৷ হাসপাতালে চিকিৎসা করেই সাপে-কাটা ওই নাবালিকা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল৷

গত শনিবার রাতে কালাচ সাপ কেটেছিল অশোকনগরের নোটনি গ্রামের বাসিন্দা বিভাস দাসের মেয়ে শিপ্রাকে৷ এগারো বছরের মেয়েকে রাতেই অশোকনগর হাসপাতালে নিয়ে আসেন বিভাস দাস৷ কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্য শিপ্রাকে ১২ ভায়াল এভিএস দেন৷ রবিবার অন্য এক চিকিৎসক শিপ্রাকে বারাসত হাসপাতালে রেফার করে দেন৷ মেয়েকে নিয়ে রবিবার রাতে বিভাসবাবু আসেন বারাসত হাসপাতালে৷ সেখানেই দালালের খপ্পরে পড়েন তিনি ও তার স্ত্রী৷

বিভাস দাসের অভিযোগ, 'ওঝার কাছে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রীতিমতো জোর করা হয় তাকে৷ তিনি রাজি না হওয়ায় তার স্ত্রীকে পাকড়াও করে দালালেরা৷ শেষে তিনি পুলিশ ডাকতে গেলে পালিয়ে যায় ওই দালাল'৷

বারাসতের চিকিৎসক অমিত আগরওয়ালের অধীনে ভর্তি করা হয় শিপ্রাকে৷ দেখা যায়, অশোকনগরে পাওয়া এভিএসের গুণেই শিপ্রা সুস্থ হয়ে গিয়েছে৷ রাতটুকু পর্যবেক্ষণে থাকার পর সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ছুটি পায় শিপ্রা৷ বাড়ি ফিরে রাতে ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্যকে ফোন করে ধন্যবাদও জানান বিভাস দাস৷ তখনই দালালের বিষয়টি উঠে আসে৷ 
জানা যায়, ওই দালাল বারাসতের মেডিসিন ওয়ার্ডে ঘুরঘুর করছিল৷ বিভাস দাসের মত ‘অসহায়’ অবস্থার সুযোগ নিয়ে ওই দালাল ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়৷ বলে, “কাছেই এক ধন্বন্তরী ওঝা রয়েছেন৷ যেকোনও সাপের বিষ নামাতে পারেন৷ ওখানে মেয়েকে নিয়ে চলুন৷ এখানে থাকলে মেয়ে বাঁচবে না৷” বিশিষ্ট চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার থেকে অনেক বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মরেন৷ তা-ও এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস সেভাবে গতি পায়নি৷

বিভাসবাবু অবশ্য হাসপাতালের উপরই ভরসা রেখেছেন৷ শুধু বিভাস দাস নন, এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি অনেকেই হয়েছেন৷ গোসাবাতে কিছুদিন আগে এর থেকেও ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল৷ একটি সাপে-কাটা রোগীকে হাসপাতালের বেড থেকে তুলে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিল একদল মানুষ৷ এমনকী চিকিৎসকদের উপর চড়াও হয়েছিল তারা৷

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওঝাদের নিয়ে কর্মশালা করা উচিত সরকারের৷ একই মত ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির রাধানগর শাখার সম্পাদক সৌম্য সেনগুপ্তর৷ তিনি জানিয়েছেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু হওয়া রোগীর ক্ষতিপূরণে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে৷ এর অর্ধেকও যদি প্রচারে ব্যবহার হত তাহলে মানুষকে চেষ্টা করেও ভুল বোঝাতে পারত না ওঝারা৷

সূত্রঃ সংবাদ প্রতিদিন

বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর