ভারতের কেরলার একটি গরীব পরিবারে জন্ম। শৈশবে পড়াশোনার বদলে কাজে নেমে পড়া, সেটাও আবর্জনার স্তুপ ঘেঁটে কার্পাস তুলার বীজ কুড়ানো। আর সেখান থেকে চেষ্টা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের বিলাসবহুল বুর্জ খলিফার ২২টি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক তিনি। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই করে দেখিয়েছেন কেরলার জর্জ ভি নেরিয়াপারামবিল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কার্পাস তুলার চাষ করতেন। অনেক বীজ অপ্রয়োজনে ফেলে দিতেন তারা। ১০/১২ বছর বয়স তখন আমার। আমি আবর্জনা ঘেঁটে ওই কার্পাস তুলার বীজ খুঁজে বের করতাম। এরই মধ্যে আমি আবিষ্কার করেছিলাম, ওই বীজ থেকে চমৎকার এক ধরনের আঠা তৈরি করা যায়। আমি আবর্জনা ঘেঁটে ওই বীজগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আঠা বানাতাম, তারপর সেই আঠা বিক্রি করতাম বাজারে।’
সেই থেকে ব্যবসায় হাতে খড়ি হয় জর্জের। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে ১৯৭৬ সালে ভাগ্যান্বেষণে তিনি চলে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায়। ব্যবসায়ীমনস্ক জর্জের বুঝতে সময় লাগেনি, আরব আমিরাতের প্রচন্ড গরমে সবচেয়ে ভাল চলবে এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবসা। জর্জের হিসাবে এতটুকু ভুল ছিল না। এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবসায়ী হিসেবে একটু একটু করে উন্নতির সোপান বেয়ে উপরে উঠতে থাকেন জর্জ।
বেশ কয়েকবছর পর কার্যসূত্রে জর্জকে আসতে হয় দুবাইয়ে। তখন সদ্য শেষ হয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফার নির্মাণ। বাড়িটির দিকে তাকিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে যায় জর্জের। সঙ্গে ছিলেন এক বন্ধু। তিনি ব্যঙ্গর সুরে জর্জকে বলেন, ‘কী এত দেখছিস! ওই বাড়ির চৌকাঠ পেরোবার যোগ্যতাও তোর নেই।’
ব্যঙ্গর তীরে মর্মাহত হলেও ভেঙে পড়ার মানুষ ছিলেন না জর্জ। বরং মনে মনে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন তিনি। আরও মন-প্রাণ দিয়ে ব্যবসা চালাতে থাকেন। আরও নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিস্তার দিতে থাকেন নিজের ব্যবসাকে। আজ তাঁর মালিকানায় জিইও গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস দুবাইয়ের অন্যতম সফল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি সেই বুর্জ খালিফার ৯০০টি অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে ২২টির মালিক জর্জ।
জর্জ জানালেন, ‘২০১০ সালে খবরের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেখে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে নেই। এরপর ধীরে ধীরে একটা একটা করে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করি। এখন আমার মালিকানায় রয়েছে মোট ২২টি অ্যাপার্টমেন্ট। সুযোগ হলে আরও ফ্ল্যাট কিনব।’
বিডি-প্রতিদিন/০৫ অক্টোবর, ২০১৬/মাহবুব